রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন

গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন

ঢাকায় ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে সতেরো শতকের প্রথমভাগে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজদের সঙ্গে গ্রিকরাও ঢাকায় আসেন। ভারতে গ্রিকদের আগমন ঘটে ষোড়শ শতকের শুরুর দিকে। উপমহাদেশে যে সব গ্রিক এসেছিলেন তাদের বেশির ভাগই ছিলেন ব্যবসায়ী। অধিকাংশ গ্রিকের ঠাঁই হয়েছিল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। ১৭৭০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে ঢাকায় দুই শতাধিক গ্রিক বসবাস করতেন। তারা বিশেষত কাপড়, পাট, লবণ ও চুনের ব্যবসা করতেন। এখান থেকে পাট ও কাপড় ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি তারা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বংশ পরম্পরায় থেকে যান দীর্ঘদিন। তাদের অনেকেই এদেশে মৃত্যুবরণ করেন এবং এখানেই সমাহিত করা হয়। বহু সময় ধরে গ্রিকরা এখানে বসবাস করলেও বর্তমানে দেশে তাদের কোনো স্থাপত্য নেই বললেই চলে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে গ্রিক কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় যে সব গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন ছিল তা সব বিলীন হয়ে গেছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক টিএসসিতে রয়েছে এদেশে গ্রিকদের সর্বশেষ স্মৃতিচিহ্নের। তৎকালে নারায়ণগঞ্জে বসবাসকারী 'ডিমিট্রিয়াস' নামক এক গ্রিক পরিবারের চার সদস্যের স্মৃতিতে নির্মিত একটি সমাধি সৌধ রয়েছে এখানে। আনুমানিক ১৮০০-১৮৪০ সালের দিকে নির্মিত হয় এটি। কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে এটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। টিএসসি ভিতরে সবুজ মাঠের দক্ষিণ কোণায় অবস্থিত এ সমাধিটি। হলুদ রঙের এ সমাধি সৌধটি দেখতে চতুষ্কোণ আকৃতির কুটিরের মতো। ভিতরে প্রবেশের পথ রয়েছে পূর্ব দিকে। চারদিকে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো এটি। ভিতরে প্রবেশের দরজার ওপর গ্রিক ভাষায় লেখা রয়েছে যার বাংলা অনুবাদ- 'তারাই আশীর্বাদপ্রাপ্ত যারা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছে মৃত্যুর জন্য।' ভিতরের দেয়ালে রয়েছে কালো রঙের ৯টি পাথর বা শিলালিপি। এর পাঁচটি গ্রিক এবং চারটিতে ইংরেজি ভাষায় লেখা। অযত্ন-অবহেলায় অনেকটা বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে এ সৌধটি। দেয়ালের কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে পড়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গ্রিক হাইকমিশনের অর্থায়নে সংস্কার করা হয়েছিল এটি। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক আলমগীর হোসাইন বলেন, এ সৌধটি সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রিক হাইকমিশনের। কিন্তু অনেক দিন যাবৎ তারা এটির কোনো সংস্কার কাজ করেননি।

 

সর্বশেষ খবর