রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা

মিনি জাদুঘর ডাকসু সংগ্রহশালা

মিনি জাদুঘর ডাকসু সংগ্রহশালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসকে সহজে জানার উপায় হচ্ছে ডাকসু সংগ্রহশালা। ১৮৮৩ সাল থেকে এদেশের মুদ্রা, দুর্লভ আলোকচিত্র, পুস্তক, কোলাজ পদ্ধতির পোস্টার, পত্রিকা কাটিং, ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ইত্যাদি ইতিহাসের উপাদান সংরক্ষিত আছে এখানে। তাই এটিকে অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'মিনি জাদুঘর' হিসেবে অভিহিত করেন।

১৯৯২ সালের ৭ জানুয়ারি ডাকসু ভবনের নিচতলায় ছোট্ট একটি কক্ষে যাত্রা শুরু করে এ সংগ্রহশালা। ডাকসু সংগ্রহশালায় প্রবেশের আগে চোখে পড়ে ভবনের দেয়ালে অাঁকা ভাষা শহীদদের ম্যুরাল 'চেতনায় একুশ'। ভিতরে প্রবেশ করলেই বিভিন্ন সময়ের ছাত্রনেতা, রাজনীতিবিদ, শহীদ, শিক্ষাবিদ, দার্শনিকদের ছবি দৃষ্টি কেড়ে নেয়। সংগ্রহশালার এক কোণায় রয়েছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আমতলার সেই আমগাছের ধ্বংসাবশেষ। কাচের তৈরি একটি বক্সে রাখা হয়েছে এটি। কক্ষের ভিতরে চোখ বোলালেই দেখা মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। দেয়ালের সব জায়গায় রাখা হয়েছে বিভিন্ন তথ্য সংবলিত আলোকচিত্র। এছাড়া এখানে রয়েছে ৩৫ জন ভাষাসৈনিকের মুদ্রিত সাক্ষাৎকার, ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক ২৯টি পোস্টার, ভাষাসৈনিকদের ১৫টি আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংবলিত ছবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্তের আলোকচিত্র, ভাষাসৈনিক আবুল কাসেম ও খালেক নওয়াজ খানের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, প্রচারপত্র, স্মারকলিপি ইত্যাদি। সব মিলিয়ে পুুরো সংগ্রহশালা যেন দেশের শিল্প, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অপরূপ সমন্বয়ের বহিঃপ্রকাশ। শুরু থেকেই যে মানুষটির অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিরন্তন প্রচেষ্টায় ডাকসু সংগ্রহশালা আজ এত সমৃদ্ধ তিনি হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা গোপাল দাস। তিনি ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে নোয়াখালী জেলার সোনাগাজী থানার চরমজলিশপুরে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেষ বয়সে এসেও ক্যামেরা কাঁধে বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিংয়ের ছবি তুলে সযত্নে সংরক্ষণ করেন সংগ্রহশালায়। তার চিন্তা-চেতনায় যেন এদেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার স্পৃহা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে একটি মহল অপচেষ্টা চালায় তখন ডাকসু সংগ্রহশালা শিক্ষার্থীদের সঠিক ইতিহাসের দিশা দিয়েছে। তাদের উৎসাহ জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হতে।

গোপাল দাস জানান, প্রতিদিন গড়ে চার শতাধিক দর্শনার্থী ভিড় করে এখানে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। দেশের বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে ভিড় জমায় এখানে।

 

সর্বশেষ খবর