রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
থিঙ্ক পজিটিভ

প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

আলো ঝলমলে সুখের দিনে মনের কোণে জমে থাকা মেঘলা আকাশ ছায়া ফেলতে পারে চলার পথে। জীবনে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলতে প্রয়োজন পজিটিভ বা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এ গুণটা আয়ত্ত করতে পারলে এগিয়ে যাওয়া যায় ক্যারিয়ার দৌড়ে। হওয়া যায় সফল। লিখেছেন-শামছুল হক রাসেল

প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

অফিসে ঠিক ১০টায় জরুরি মিটিং। সকালে উঠে এক মিনিটও ফুরসত নেই কাশফার। কিন্তু দেখা গেল কাজের বুয়া আজকের দিনটাই বেছে নিয়েছে না আসার জন্য। স্বামী সাইদও বাড়ি নেই। সে থাকলে অন্তত কিছু সাহায্য করতে পারত। কিন্তু অফিস ট্যুরে সেও এক সপ্তাহ হলো বাইরে। না, সর্বনাশের এখানেই শেষ নয়। ৯ বছরের মেয়ে ফাবিহার কাল রাত থেকেই জ্বর। শেষ পর্যন্ত গৃহস্থালি কাজ, রান্না-বান্না এবং অসুস্থ মেয়ের দেখাশোনা করে কাশফা যখন বাড়ির বাইরে পা রাখল তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৯টা পেরিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। অতএব ছুট, ছুট, ছুট। পরিস্থিতিটা কি খানিকটা চেনা চেনা লাগছে? এক এক সময় সবারই মনে হয়, বোধ হয় ডেডলাইন মেনটেইন করাই আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। আর এই ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়লেই অাঁকড়ে ধরে ডিপ্রিশন আর হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা। তাহলে কি এই স্ট্রেস থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো রাস্তা নেই? অবশ্যই আছে। স্ট্রেস, টেনশন, অ্যাংজাইটি মোকাবিলা করার একটাই অস্ত্র হলো পজিটিভ আউটলুক বা জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।

পজিটিভ বা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : আমরা মনে যা ভাবছি তার ওপর নির্ভর করে আমাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ এমন কি বিভিন্ন বিষয়ে নেওয়া বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও। ধরা যাক কারও ব্যবহারে আপনি খুব অপমানিত বোধ করেছেন। সারাদিন সেই অপমানবোধটাই আপনার মধ্যে জাগিয়ে তুলছে রাগ, বিদ্বেষ, সন্দেহের মতো নানা খারাপ অনুভূতি। দিনের শেষে হয়তো দেখা গেল অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছেন, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন এবং নিজেকে আরও সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ঠিক এ সময়ই কাজ দেবে পজিটিভ থিঙ্কিং। জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, প্রতিকূলতার মধ্যে এই পজিটিভ আউটলুকই ফিরিয়ে আনে আশা, আনন্দ এবং স্বস্তি।

কি করে হবেন পজিটিভ থিঙ্কার : * নিজের চিন্তাভাবনার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। কোনো মন্তব্য বা ঘটনা আপনার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার আগেই সেটা মনে মনে একবার কাটাছেঁড়া করে নিন। ঠিক যে কথা বা ঘটনা আপনার মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করছে সেটাকে যুক্তি দিয়ে সাজিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। যদি আপনার কোনো দোষ থেকে থাকে তাহলে সেটাকে একটা লার্নিং হিসেবে নিন যাতে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার না হতে হয়। যদি আপনার আদৌ কোনো ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে অন্তত নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার আছেন জেনে নিশ্চিন্তে থাকুন। অপরের ভুলের জন্য নিজের মনকে কলুষিত করা কোনো কাজের কথা নয়। * বন্ধু বা কলিগদের মধ্যে যারা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত, তাদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের থেকে পরামর্শ চান। এরা আপনার কর্মক্ষমতা বাড়াবে, সাহস দেবে এবং জীবনকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে। যারা নেগেটিভ টেম্পারমেন্টের মানুষ অর্থাৎ সব কিছু অহেতুক সমালোচনা করেন, অন্যের সাফল্য সন্দেহের চোখে দেখেন তাদের এড়িয়ে চলুন।

* প্রতিদিন সকালে উঠে নিজেকে নিজে বলুন, 'আমি ভালো আছি। আমি ভালো থাকব'। দৃঢ় বিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে বলা এই কথাগুলো আপনাকে নতুন সাহস জোগাতে সাহায্য করবে। এছাড়া 'আমার কপালটাই খারাপ' বা 'আমার দ্বারা কিছু হবে না' এ জাতীয় মন্তব্য করা বন্ধ করে দিন। বরং 'এ কাজটা শক্ত কিন্তু আমি পারব' এ চিন্তাটাই মনে গেঁথে নিন। * বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সেল্ফ ইমপ্রুভমেন্ট বা পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্টের বইও দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।

* নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন। সাংসারিক কাজকর্মই হোক বা ক্যারিয়ার- সব ব্যাপারেই একটা খসড়া পরিকল্পনা থাকা খুবই জরুরি। প্রতিদিন না হোক সপ্তাহের শুরুতে বাড়ির কাজ আর অফিসের কাজের দুটি আলাদা আলাদা চেকলিস্ট বানিয়ে নিন। এক একটা কাজ শেষ হলেই লাল পেনসিল দিয়ে কেটে দিন। সব কাজ ঠিকমতো শেষ হলে নিজেকেই ছোট্ট একটা প্রাইজ দিন। ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে করতে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। আর আত্মবিশ্বাস থেকেই পজিটিভ থিঙ্কিংয়ের জন্ম।

* সারাদিনে যা করেছেন তা দিনের শেষে মনে করুন। কোন কাজটি পারেননি, সেটা নিয়ে চিন্তা না করে যেখানে সাফল্য পেয়েছেন সেটা নিয়ে ভাবুন।

 

 

সর্বশেষ খবর