সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিক্ষা ও ভালো ব্যবহার দুটোই জরুরি

শামছুল হক রাসেল

শিক্ষা ও ভালো ব্যবহার দুটোই জরুরি

ছোটবেলা থেকে অনেক বাবা-মা ছেলেমেয়েদের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে উপদেশ দেন। এটা আগামী দিনে আমাদের সবার দৈনন্দিন তথা কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লাগে। মায়েরা সন্তানদের কয়েটি কথা বেশি বলেন। যেমন— ব্যবহারই মানুষের পরিচয়, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর। অন্যদিকে বাবারা বলেন, ভদ্র ব্যবহার কর। আর সন্তানরা ভাবে, অভিভাবকরা এত জ্ঞান দেন কেন। বর্তমান পেক্ষাপটে করপোরেট দুনিয়ায়ও এ ধরনের উপদেশ প্রাসঙ্গিক। আমরা ‘ভালো ব্যবহার’-এর উপদেশ অহরহ শুনি। এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ‘সংগঠনের আচরণ’ (অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার) নামক একটি বিষয়ই আছে। এরও রয়েছে নানা রূপ। আচরণ সম্পর্কে বিস্তর পেপার আছে, বহু বই লেখা হয়েছে। একজন ম্যানেজারকে কেন বস হিসেবে খারাপ বলা হয়? একটা টিমের

ম্যানেজার কেন তার কোনো কর্মী সম্পর্কে বলেন, ও অন্য কারও কথা শোনে না, নিজের মত ছাড়া অন্য কোনো মতও গ্রহণ করে না? কিংবা ওর অ্যাটিচ্যুড প্রবলেম আছে? করপোরেট ওয়ার্ল্ডে, ‘ব্যবহারই মানুষের পরিচয়’— কথাটা প্রাসঙ্গিক ও সত্য। অফিসে কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন আমাদের নানা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময়ই আমাদের এমন পরিস্থিতিতে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কখনোবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হয় না, কিন্তু আলোচনা করতে হয়। কতটা ভালোভাবে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তা নির্ভর করে যারা পরিস্থিতির মধ্যে আছেন, তারা পরস্পরের সঙ্গে কতটা কার্যকরভাবে আলাপ-আলোচনা করে মীমাংসার চেষ্টা করতে পারেন তার ওপর। সে কারণেই আমরা কি বলছি, তার সঙ্গে কীভাবে বলছি, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কি এবং কীভাবে, এই দুটিকে মিলিয়েই আমাদের আচরণ নির্ধারিত হয়। ভালো ব্যবহার মানে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক কথা বলা এবং ঠিকভাবে বলা। একটা কথা মনে রাখা খুবই জরুরি। ব্যবহার কেমন, সেটা কিন্তু অন্যরা দেখে এবং বিচার করে। সেই বিচারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্যবহার ভালো কিন্তু অন্যরা যদি তা মনে না করে তাহলে বুঝতে হবে আপনার কোথাও একটা গণ্ডগোল আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে পরিশ্রমী হওয়া যেমন দরকার, তেমনি ‘সুনাগরিক’ হওয়াও দরকার এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের সুনাগরিক হওয়ার জন্য ব্যবহারটা মার্জিত হতে হবে। ব্যক্তিগত এবং পেশাগত ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা শব্দ ব্যবহার হতে শুনি ট্রাস্ট অর্থাৎ বিশ্বাস। যেমন-  অনেক সময়ই কারোর সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমরা বলে থাকি ‘আমি ওকে বিশ্বাস করি’ বা ‘আমি ওকে বিশ্বাস করি না।’ বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কোনো ব্যক্তির প্রতি আমাদের এ সিদ্ধান্ত অনেকটাই তার আচরণের ওপর নির্ভর করে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকলে যে কোনো সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করা যায়। ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর’— এ কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থটা সবাই এখন উপলব্ধি করতে পারে।

উপরোক্ত কথাগুলো উইলিয়াম ইউরি, রজার ফিশার ও ব্রুশ প্যাটনের লেখা গেটিং টু ইয়েস বইয়ে ফুটে উঠেছে। আপনি যেমন অপর ব্যক্তির কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার আশা করেন, ঠিক তেমনই সেও একই আচরণ আশা করে। আর এটা যদি আমরা করতে পারি, তা হলে সবাই সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারব। এগিয়ে যেতে পারব উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে।

সর্বশেষ খবর