দিন-রাত পড়াশোনা ও কঠিন পরিশ্রম করে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর অনেকটা অবসর জীবনযাপন করছে নাজনীন। আপাতত বেশ কিছুদিন কোনো লেখাপড়ার ঝামেলা নেই। তাই নিশ্চিন্তে অনেকটা ফুরফুরে মন নিয়ে সে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এভাবে অযথা ঘোরাঘুরি করে, গান শুনে, সিনেমা দেখে কতটা সময়ই-বা নষ্ট করা যায়! সপ্তাহ খানেকের মাথায় নাজনীন বিরক্ত হয়ে ওঠে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, কিছু একটা করার। কিন্তু কী করবে তাও ঠিক ভেবে উঠতে পারে না। এভাবে ভাবতে ভাবতেই প্রায় একটি মাস তার জীবন থেকে চলে যায়। এরপর যখন কিছু একটা করবে বলে মনস্থির করে, ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তাই হা-হুতাশ করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু তার সহপাঠী ও বন্ধুদের মধ্যে সচেতন বেশ কয়েকজন এই অবসরকে কাজে লাগিয়ে অনেকটা এগিয়ে যায়। নাজনীনের মতো অনেকেই পরীক্ষার পরের সময়টিতে আনন্দের বাঁধভাঙা জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয়। তবে এই আনন্দের সঙ্গে যদি থাকে গঠনমূলক কোনো কিছু করার মানসিকতা, তবে এর চেয়ে আনন্দময় সময় কাটানো আর কী হতে পারে! বিজ্ঞানের এ যুগে কম্পিউটার জানা অপরিহার্য হয়ে উঠছে দিনকে দিন। কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি থেকে শুরু করে চাকরি— সব জায়গায় কম্পিউটার জানাটা হয়ে পড়ছে অত্যন্ত জরুরি। এ অবসরে কম্পিউটারের বিশদ না জানলেও অন্তত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল ও মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টের কাজ শিখে রাখাটা কঠিন কিছু নয় নিশ্চয়ই।
গান শুনতে, ছবি দেখতে, ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করেন অনেকেই। ভালো গান, ভালো ছবি যেমন বিনোদন দেবে, তেমনি নিজের অজ্ঞাতেই তৈরি করবে সুন্দর রুচিবোধ। যাদের ফটোগ্রাফির শখ আছে তাদের ফটোগ্রাফি শেখার জন্য এটিই হতে পারে শ্রেষ্ঠ সময়। ফটোগ্রাফি শেখার জন্য গড়ে উঠেছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও করে নেওয়া যায় ৩ থেকে ৬ মাসের স্বল্পমেয়াদি কোর্স। এসব কোর্স করে হাতেখড়ি নিতে পারেন ক্যামেরায়। এই প্রশিক্ষণই খুলে দিতে পারে ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ারের দ্বার। ইংরেজির ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে এই সময়টি কাজে লাগাতে পারেন শিক্ষার্থীরা। শিখতে হবে ইংরেজি। মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি চর্চা কিংবা ইংরেজি ভাষাটা জানা ভালো। বলা যায় অনেকটাই আবশ্যকীয়। বর্তমান চাকরির বাজারে ইংরেজি জানা লোকের কদর অনেক বেশি। আগামীতে এই চাহিদা নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে। মিডিয়া সম্পর্কে যাদের আগ্রহ আছে তারা এ সময়টিকে কাজে লাগিয়ে করতে পারেন এ সম্পর্কীয় কিছু কোর্স। সাংবাদিকতা, সংবাদ পাঠ, উপস্থাপনা, ভিডিও এডিটিং ও অভিনয় শেখার জন্য আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে বেশকিছু ভালোমানের প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া অন্যতম। এছাড়া শিখে নিতে পারেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স। এসব কোর্স শেখানোর জন্যও ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। রং-তুলি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে যাদের ভালো লাগে তারাও বসে না থেকে আঁকাআঁকির ওপর একটি কোর্স করে নেন। অজানাকে জানার আগ্রহ যাদের ভিতর প্রবলভাবে কাজ করে তারা চোখ বুজে ট্যুরিজমের ওপর কোর্স করে নিতে পারেন। এ ছাড়াও হস্তশিল্প, ব্লক-বাটিক, ক্রিস্টাল মোম তৈরি ইত্যাদি বিষয়েও প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এজন্য শুধু পরীক্ষার পর এ অবসর সময়টুকুই নয়, যখনই সময় পাওয়া যায় তখনই সেই সময়টুকু হেলাফেলায় নষ্ট না করে কোনো সৃজনশীল কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এসব কাজই ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। আর তখনই গড়া যাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।