মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সবার আগে দৈনন্দিন পরিকল্পনা

শামছুল হক রাসেল

সবার আগে দৈনন্দিন পরিকল্পনা

অফিসে যাওয়ার বাসে ওঠা মাত্রই মনে পড়ল জরুরি ফাইলটার কথা। যতদূর মনে পড়ছে ফাইলটা হয়তো ডাইনিং টেবিলে পড়ে আছে। কিংবা বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন, এমন সময় মুঠোফোনে বসের বিরক্ত কণ্ঠস্বর। যথারীতি একই ডায়ালগ, জরুরি রিপোর্টগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি চেম্বারে আস। অথবা বজ্রপাতের মতো হঠাৎ মনে পড়ল যে, তিন দিন ধরে বস ক্রমাগত আপনাকে কোনো কাজ শেষ করার তাড়া দিচ্ছেন। অথচ আপনি ক্রমাগতই ভুলে যাচ্ছেন। একটু ভালো করে ভেবে দেখুন তো, ওয়ার্কপ্লেসে কাজের এই গণ্ডগোলের জন্য কি শুধু আপনার ভুলো মনই দায়ী? নাকি আপনার ডিকশনারিতে দৈনন্দিন কর্মপরিকল্পনা বা ডেইলি ওয়ার্ক প্লান বলে কোনো শব্দই নেই। নিজের কাজ গুছিয়ে করা নিঃসন্দেহে একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। এই সাফল্য ছোঁয়ার জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনাকে ঠিকমতো মেনে চলার মানসিকতা। দৈনন্দিন পরিকল্পনার অভাব কর্মজীবী মানুষের প্রধান সমস্যা। সময়ের অভাবে কাজ গুছিয়ে না করা, জরুরি জিনিস ভুলে যাওয়া, এক কাজ দুইবার করে ফেলা ইত্যাদি যদি নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে অফিসের কাজের সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক শান্তিও বিঘ্নিত হবে পুরোমাত্রায়। পরিকল্পনাবিহীন কাজকর্ম ও জীবনযাত্রার আপনার সাফল্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিকল্পিতভাবে অনেক কঠিন কাজও খুব সহজে সম্পন্ন করা যায়। আদায় করা যায় সন্তুষ্টি।

কি করবেন : প্রথমেই আপনার যেটা প্রয়োজন, তা হলো একটা ভালো ডায়েরি-কাম প্ল্যানার। শুক্রবার বা আপনার ছুটির দিনে আধাঘণ্টা সময় বের করে ছকে ফেলুন সপ্তাহের প্রতিটি দিন আপনার কি কি বাড়ির কাজ এবং অফিসিয়াল ডিউটি আছে। প্ল্যানিংটা এমনভাবে করুন যাতে কোনো দিনই আপনার ওপর বেশি চাপ না পড়ে। যেদিন আপনার অফিসে লম্বা মিটিং থাকে, সেদিন মিটিংয়ের পরে শুধু রিল্যাক্সেশনের জন্যই রাখুন। আবার যেদিন অফিস অপেক্ষাকৃতভাবে হালকা, সেদিন বাড়ি ফেরার পথে মাসিক বাজার সেরে নিতে পারেন। অফিস বা বাড়িতে, যখনই কোনো নতুন কাজ যোগ হবে (তা যে কাউকে টেলিফোন করার মতো তুচ্ছ কাজই হোক না কেন), তত্ক্ষণাৎ প্ল্যানারে নোট করে নিন। কাজটা করতে দেরি হলেও, কখনো ভুলে যাবেন না। প্রথম থেকেই অফিসের সময় এবং বাড়ির সময়টা আলাদা করুন। খুব ইমার্জেন্সি না হলে অফিসের কাজ বাড়িতে আনবেন না বা ছুটির দিনে অফিসের কাজ করবেন না। ঠিক একইভাবে যতক্ষণ অফিসে আছেন, ততক্ষণ আপনি পুরো প্রফেশনাল। অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, পার্সোনাল কাজ, ফোনে গসিপ করা— এগুলো প্রত্যেকটিই অফিসের ডিসিপ্লিনবিরুদ্ধ। এগুলো থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন। সিস্টেমেটিক্যালি কাজ করার জন্য টেবিলের সামনে প্রতিদিনের একটা ডিউটি লিস্ট কাজের  প্রায়োরিটি অনুযায়ী টাঙিয়ে রাখুন, যাতে ঠিকভাবে প্রত্যেকটি করে উঠতে পারেন। আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী হ্যান্ডব্যাগটাকে ভালো করে গোছালে অনেক সমস্যার সহজেই সমাধান হবে। একটু বেশি দাম দিয়ে বড়, বেশি পকেটযুক্ত ব্যাগ কিনুন। বাড়ি, গাড়ি, আলমারি, ড্রয়ার-যতগুলো চাবি আপনি ক্যারি করেন তার জন্য একটা আলাদা পকেট বরাদ্দ করুন। সেলফোনও নির্দিষ্ট পকেটে রাখুন। তাহলে ইমার্জেন্সির সময় সারা ব্যাগ খুঁজতে হবে না। তাই  এসব ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন পরিকল্পনা।

সর্বশেষ খবর