সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কর্মস্থলে মানসিক চাপ এড়াতে...

শামছুল হক রাসেল

কর্মস্থলে মানসিক চাপ এড়াতে...

কাজ করতে গেলে কর্মস্থলে টুকটাক সমস্যা হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া কাজের চাপ, সময়ের চাপ, সহকর্মীদের সঙ্গে মতের অমিল—এসবই কাজের পরিবেশের শান্তি হরণ করে। বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে— দ্রুততর হয়ে পড়ছে জীবনযাপন। বাড়ছে জীবন যন্ত্রণা, বাড়ছে আবেগীয় সমস্যা। ধৈর্যহীন হয়ে যাচ্ছি আমরা। অল্পতেই রেগে যাচ্ছি, খেপে যাচ্ছি, সহিংস আচরণ করছি, রাগ করছি অন্যের সঙ্গে। নিজেদের কন্ট্রোল করার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলছি। বুদ্ধি দিয়েই যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে হয়। কিন্তু আমরা প্রত্যক্ষ করি, বুদ্ধি দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় না। আবেগীয় সমস্যা কর্মদক্ষতা খর্ব করে। বুদ্ধি খরচ করে আবেগীয় সমস্যার নেতিবাচক অবস্থার উত্তরণ ঘটে না।  ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা যায়, নিজেকে সুশৃঙ্খল রাখা যায়, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো যায়। ফলে কর্মস্থল নানাদিক থেকে সমৃদ্ধ হয়।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স : ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হচ্ছে কিছু দক্ষতার সমাহার— যার সাহায্যে একেই অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে, দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনে সফলতার জন্য বেশি আইকিউ স্কোর সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। বরং ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োজন অত্যধিক। ইকিউ (EQ) এই সংকেত দিয়েই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বোঝানো হয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ইকিউ একটি গুরুত্বপূর্ণ টুলস। ইকিউ-ই কর্মচারী এবং মালিকের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের পথ এভাবেই তৈরি হয়। মনে রাখতে হবে, দ্বন্দ্বের মীমাংসার মধ্য দিয়েই কর্মস্থলে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকে। এক্ষেত্রে কর্মচারী এবং মালিক পক্ষ উভয়কেই ইকিউ-এর আলোকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

ব্যবহার : ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা ইকিউ ব্যবহারের প্রথম শর্ত হলো নিজের অনুভূতির প্রতি মনোযোগী হওয়া, অন্যের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক আচরণের উৎস ধরা, নিজের ইমোশন শনাক্ত করা। দ্বন্দ্ব থেকে সৃষ্টি হতে পারে আবেগীয় প্রতিক্রিয়া, নেগেটিভ ইমোশনই এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়। সহকর্মীদের মাঝে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে পারে, মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে, উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। অতিদ্রুতই এ সময় ব্রেনে ইলেকট্রো কেমিক্যাল পদার্থ নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, আগ্রাসী ও মারমুখী ক্ষোভ জেগে ওঠে। এ সময় অপেক্ষা করতে হবে, কমপক্ষে তিন থেকে ছয় সেকেন্ড। চট করে নিজের অনুভূতির প্রতি সতর্ক হতে হবে। অপেক্ষা করার অর্থ হচ্ছে, ইলেকট্রো-কেমিক্যাল রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়া নিষ্ক্রিয় হতে সময় দেওয়া, মাত্রা কমতে সুযোগ তৈরি করা। তবে অপেক্ষা করা দুরূহ একটি কাজ। মনে রাখতে হবে, যদি ওই মুহূর্তে ভাবা যায়— ইমোশনাল out burst মানসিক স্বাস্থ্যের বিপর্যয় ডেকে আনে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে, সর্বোপরি নিজের মানবীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয় তাহলে ত্বরিত অপেক্ষা করার কৌশল রপ্ত হয়ে যাবে। এই কৌশল রপ্ত করার মাধ্যমে, কেবল কর্মক্ষেত্রে নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই জয়ী হওয়ার পথ পেতে পারেন যে কেউই। প্রকৃতপক্ষে নিজের আবেগ বুঝতে পারলে নিজের স্কিল বাড়ানো সহজ, অন্যের আবেগ বোঝার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়। ফলে যে কোনো দ্বন্দ্বকে পজিটিভ ফোর্স হিসেবে রূপান্তর করার শক্তি নিজের মাঝেই গড়ে ওঠে।

সামগ্রিক সফলতার জন্য এটি মানুষের একটি বড় গুণ। সবশেষে বলা যায়, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের মূল উপাদান হচ্ছে নিজের আগ্রহ, উদ্দীপনা, উৎসাহ, আশাবাদ এবং পজিটিভ কমিটমেন্ট। আসলে নিজেদের দক্ষতাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।

সর্বশেষ খবর