মে মাস থেকে তিন দফা বন্যা। বন্যার রেশ কাটার আগেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে দেশজুড়ে অচলাবস্থা। গেল তিন মাস ধরে সিলেটে দেখা মিলেনি পর্যটকের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল আযহাসহ পর্যটনের এই ভরা মৌসুমে সিলেট বিভাগে পর্যটনখাতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচশত কোটি টাকার উপরে। চলমান পরিস্থিতিতে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না হোটেলগুলো। সিলেটের পর্যটন শিল্প রক্ষায় সরকারি প্রণোদনার বিকল্প নেই বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন শিল্পকে ঘিরে সিলেটে গড়ে ওঠেছে কয়েকশ’ হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। এই খাতে বিনিয়োগ কয়েক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সিলেটের রেস্টুরেন্ট, রেন্ট-এ-কার, কুটিরশিল্প ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পর্যটন শিল্প। পর্যটনকেন্দ্রগুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় লাখো মানুষের জীবন জীবিকার চাকা ঘুরে। কেউ নৌকা দিয়ে পর্যটক পরিবহন করে, আবার কেউ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু গত মে মাস থেকে সিলেটে শুরু হয় বন্যা। তিন দফা বন্যায় বার বার বন্ধ ঘোষণা করা হয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো।
নদীতে পানি ও স্রোত বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটকরা সিলেটবিমুখ হয়ে পড়েন। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সিলেটে পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। ফের ঘুরে দাঁঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন পর্যটনখাতের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন মিলিয়ে যায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সংঘাত-সংঘর্ষ ও কারফিউয়ের কারণে পর্যটনখাতের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সিলেটের কয়েকজন হোটেল ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে পর্যটন ব্যবসা কমলেও সিলেটে পর্যটক আগমন হয় সবেচেয়ে বেশি। বর্ষায় প্রকৃতি নবযৌবন লাভ করে, এতে সৌন্দর্য্য বাড়ে প্রকৃতিনির্ভর সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর। ফলে ওই সময় সারাদেশের পর্যটকদের ঝোঁক থাকে সিলেটে। কিন্তু এবার বন্যা ও কোটা আন্দোলনে পর্যটকদের দেখা মিলেনি সিলেটে। এমনকি বন্যার কারণে ঈদুল আযহায়ও সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ছিল। ফলে গেল তিন মাস ধরে সিলেটের বেশিরভাগ হোটেল পর্যটকশূন্য রয়েছে।
নগরের জিন্দাবাজারের হোটেল গোল্ডেন সিটির মহাব্যবস্থাপক মৃদুল কান্তি দত্ত মিষ্টু জানান, গত তিন মাস ধরে পর্যটকদের দেখা মিলেনি। ফলে হোটেল অতিথি শূন্য রয়েছে। হোটেল ব্যবসা একদম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। মাস শেষে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল দেওয়া যাচ্ছে না। সরকারি প্রনোদনা ছাড়া হোটেলসহ সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এমদাদ হোসেন জানান, পর্যটন ব্যবসার সাথে হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, রেস্টুরেন্ট, কুঠিরশিল্পসহ অনেক খাত জড়িত। পর্যটক সমাগম বেশি হলে এসব খাতের ব্যবসা চাঙা থাকে। আর পর্যটক না আসলে এই খাতের ব্যবসায় ধ্বস নামে। গেল তিন মাস ধরে সিলেটের পর্যটন খাতের ব্যবসা খুবই কঠিন সময় পার করছে। বন্যা ও আন্দোলনের কারণে সিলেট বিভাগে এই খাতে পাঁচশত কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রনোদনার প্রয়োজন। সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভ্যাট রেয়াত দেওয়া হলে এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত