২০ এপ্রিল, ২০১৮ ১৯:১৩

চট্টগ্রাম শহরে ‘খাল পরিষ্কার’ কাজ শুরু শীঘ্রই

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম শহরে ‘খাল পরিষ্কার’ কাজ শুরু শীঘ্রই

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্বাবধানে চট্টগ্রাম শহরের মেগা প্রকল্প জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের খাল পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। বর্ষা মৌসুমে নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশী হয়ে থাকে। সেই সব এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। নগরীর আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, চাকতাই, বকশিরহাট, দেওয়ানবাজার, খাতুনগঞ্জ, বৃহত্তর বাকলিয়া, চকবাজার ও চান্দগাঁওয়ের কিছুসহ আরো বেশ কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেই দ্রুত পানি উঠে যায়। এসব এলাকাগুলোতে খাল পরিস্কারের মধ্য দিয়ে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হচ্ছে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সিইজিআইএস নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরার্মশক প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের মধ্যে বৈঠকও করেছেন বলে জানান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাল পরিষ্কারের মধ্য দিয়ে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের প্রথম ধাপ শুরু করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কিছুটা হলেও নগরবাসী সুফল দিতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর পর বাংলাদেশের বড় প্রকল্প চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প। চট্টগ্রামবাসী এতদিন আতঙ্কে ছিল জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে কি না। এরপর হবে বাস্তবায়ন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলরসহ সবাইকে অনুরোধ করছি, তারা যেন এ কাজে সহযোগিতা করেন। আপনারা এ কাজে অভিজ্ঞ। মেয়রের কাছেও প্রত্যাশা তারা অভিজ্ঞতা দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা শতভাগ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। আমাদের প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগ নিয়ে যেভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন তা শতভাগ করব। কারণ জলাবদ্ধতা নিরসন নগরবাসীর জন্য। যত দ্রুত সম্ভব আমরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হব তত মঙ্গল। নগরবাসীর কাছে অনুরোধ- বলা যত সহজ, করা তত কঠিন। এই প্রকল্পের সুফল পাব বাস্তবায়নের পর। এটা বুঝতে হবে, আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে।’

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেকে শর্তসাপেক্ষে এ জলাবদ্ধতা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে আহ্বায়ক, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং পানিসম্পদ মন্ত্রীকে সদস্য করে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার সভা করে জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেন।

সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় প্রথম দিকে ১৬টি খালের কাদা পরিষ্কার ও খননকাজ শুরু হবে। সেগুলো হলো- চাক্তাই খাল, বির্জা খাল, রাজাখালী খালু ১, মির্জা খাল, রাজাখালী খাল ২, রাজাখালী খাল ৩, মরিয়ম বিবি খাল, হিজরা খাল, মহেশখাল, কলাবাগিচা খাল, ডোমখাল, বামুনশাহী খাল (কোদালাকাটা খাল, কাটা খাল, সানাইয়া খাল, মধুছড়া খালও বামুনশাহী খালের অন্তর্ভুক্ত), চাক্তাই ডাইভারসন খাল (বাকলিয়া খাল নামেও পরিচিত), নোয়া খাল (বাইজ্জা খাল ও বালু খাল নামেও পরিচিত), খন্দকিয়া খাল ও নাছির খাল। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। প্রকল্পে ব্যয়ের মধ্যে ৩৬টি খালের মাটি অপসারণে ২৮ কোটি ৮৫ লাখ ও মাটি খননে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, নতুন ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ৩১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য ২ হাজার ৬৪০ কোটি, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপনে ২৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বন্যার পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার, ৬টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, ৫টি টাইডাল রেগুলেটর, ১২টি পাম্প হাউস স্থাপন, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন, ২০০ টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেনের স¤প্রসারণ, ২ হাজার বৈদ্যুতিক পুল স্থানান্তর, ৮৮০টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন এবং ৯২টি ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) প্রদান করেছেনে এবং একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিও পাওয়ার পরপরই ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর