২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ১৫:২৩

মিরসরাইয়ে নীরব মৎস্য বিপ্লব

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম:

মিরসরাইয়ে নীরব মৎস্য বিপ্লব

মাছ চাষই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকার মানুষের বদলে দিয়েছে ভাগ্যের চাকা। পাল্টে দিয়েছে জীবনযাত্রা। মাছ চাষ শুধু ভাগ্যই বদলায়নি, চট্টগ্রাম জেলার মোট মৎস্য চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ উৎপাদন হয় মিরসরাই উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট ও ইছাখালী চরে উৎপাদিত মাছ থেকে। মাছ চাষের মাধ্যমে তারাই এখন দেশের অর্থনীতিতে রাখছে অসামান্য অবদান।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এবং ফেনী নদীর শেষ প্রান্তে সরকার স্থাপন করে মুহুরী সেচপ্রকল্প নামের একটি বৃহৎ প্রকল্প। ওই সেচ প্রকল্পের আশপাশ এলাকায় ১৯৮৬ সালের দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রথম মাছ চাষ শুরু করে। এরপর থেকে ওই এলাকার লোকজন মাছ চাষে ঝুকে পড়ে। বর্তমানে এখানে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে মৎস্য চাষ করা হয়। এছাড়া ১ হাজার ৩৮৩ একর এলাকায় রয়েছে ১২৭ টি চিংড়ি প্রকল্প। মুহুরী প্রকল্প এলাকায় মৎস্য প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রায় ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ সফল হয়েছেন। তাই এ এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ জড়িয়ে পড়েছেন মৎস্য চাষে। 
স্থানীয় ওসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক মাষ্টার বলেন, মুহুরী প্রকল্পে উৎপাদিত মাছ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, পার্বত্য এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়। এ অঞ্চলের মানুষের বেশির ভাগ মাছের চাহিদা পূরণ করে মুহুরী প্রকল্প। বছরে আনুমানিক ২৫ হাজার ৫৫০ মেট্টিক টন মৎস্য উৎপাদন হয় এখানে। মৎস্য চাষে আয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বেশি।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় প্রচুর মৎস্য খামার। এখানকার চাষিদেরকে মাছ চাষের বিষয়ে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি। মৎস্য প্রকল্পগুলো দেশে প্রাণীজ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বড় অবদান রাখছে। হাজারখানেক উদ্যোক্তা এখানে মাছের খামার করে মৎস্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কর্মসংস্থানও হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। 

আমাদের মিরসরাই প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে এখানে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে মৎস্য চাষ করা হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে প্রতি একর থেকে বছরে এক থেকে দেড় টন মৎস্য উৎপাদন সম্ভব হত। চাষিরা আধুনিকভাবে চাষ শুরু করলে বর্তমানে প্রতি একরে ৫ টনেরও বেশি মাছ উৎপাদন হয়। রুই জাতীয় মাছ, কাতলা, মৃগেল, কালী বাউশ, সিলভারকার্প, তেলাপিয়া, পাবদা, শিং, মাগুর, মনোসেক্স তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয় এখানে। এছাড়া ১ হাজার ৩৮৩ একর এলাকায় রয়েছে ১২৭ টি চিংড়ি প্রকল্প।

মৎস্য প্রকল্পের মালিক মফিজুল ইসলাম মিল্টন জানান, এখানে ফেনী নদীতে মুহুরী বাধ দেওয়ার পর প্রায় ৫০ হাজার একর জমি জেগে ওঠে। অনেক জমি এখনো খালি রয়েছে। সরকারের উচিত মাস্টার প্ল্যান করে পরিকল্পিতভাবে এখানে মৎস্য জোন ঘোষণা করা। এই এলাকাকে সরকার মৎস্যজোন ঘোষণা করে চাষিদের পৃষ্ঠপোষকতা, ব্যাংক ঋণ, প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ করে প্রায় তিনগুণ বেশি মৎস্য উৎপাদন করা সম্ভব।

ওসমানপুর ইউনিয়নের মৎস্যচাষী মেহেদী হাসান নয়ন জানান, হিমাগার ও বরফকল না থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে মৎস্যচাষীদের। এসব সংকট না থাকলে আরও অত্যাধিক পরিমাণ মাছ উৎপাদন সম্ভব হবে মুহুরীর মৎস্য প্রকল্পগুলোতে।

বিডি প্রতিদিন/ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর