২০ মে, ২০১৮ ১৭:২২

চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে নাভিশ্বাস

রেজা মোজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে নাভিশ্বাস

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরের ফিরিঙ্গি বাজারের কাজী নজরুল ইসলাম সড়কটি সংস্কার কাজ শেষ করছে মাত্র কয়েক মাস আগে। কিন্তু এখন সে সড়কটি আবার খুঁড়ছে ওয়াসা। এ সড়কে স্থাপন করা হচ্ছে বড় বড় পাইপ লাইন। নগরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা তিনপুলের মাথা মোড়টি। প্রায় চার মাস ধরেই এখানে চসিক নির্মাণ করছে কালভার্ট। ফলে সড়কের একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু নগরের শতবর্ষী রিয়াজুদ্দিন বাজার এর পাশেই হওয়াতে দুর্ভোগে নতুন মাত্রা পেয়েছে। নিত্য যানজট লেগেই আছে এখানে। মার্কেটগামী মানুষদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

এভাবে নগরে সেবা সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীনভাবে খোঁড়াখোঁড়ির কারণে নগরবাসীকে চরম দুর্বিষহ সময় পার করতে হচ্ছে। যানজট হয়ে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীন। অন্তহীন কষ্টের মধ্যে পড়ছে পথচারি। পক্ষান্তরে এখন রমজান মাস হওয়ায় দুর্ভোগ আরো দ্বিগুণ হয়েছে।  

জানা যায়, নগরের সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে স্থানীয় সরকারের নির্দেশনা এবং চসিক মেয়র সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সব সংস্থাই সমন্বয় ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
অন্যদিকে, রাস্তা কাটা কিংবা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে চসিকের অনুমোদন নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও অনেকাংশে তা না মানার অভিযোগ আছে। অন্যদিকে, গত ৭ মে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক মতবিনিময় সভায় সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় ও পরিকল্পনা না থাকায় উন্নয়নে ব্যহত এবং মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে চসিক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, সড়ক ও জনপদ (সওজ), বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।   

চসিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চসিকের উদ্যোগে চলছে আগ্রাবাদ থেকে বড়পোল পর্যন্ত এক্সেস রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সড়ক উঁচুকরণ কাজ, নগরীর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ড্রেন নির্মাণ, জুবিলী রোড এলাকায় কালভার্ট নির্মাণসহ ছোট-বড় চার শ' প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে দুই শ' প্রকল্পের কাজ বর্ষার আগেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এক্সেস রোডের একপাশ বন্ধ থাকায় এবং রাস্তায় গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতকারীর যানবাহন ও মানুষদের। তাছাড়া চউকের উদ্যোগে চলছে নগরীর মুরাদপুর-লালখান বাজার ফ্লাইওভার নির্মাণে দুর্ভোগ বাড়ছে। নগরীর মুরাদপুর, নাছিরাবাদ দুই নম্বর গেট, চশমা গলির মুখ, পূর্বকোণ অফিসের সামনে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্প বসানোর কারণে পুরো সড়কে যানজট এখন নিত্যসঙ্গী।
অন্যদিকে, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন মোড়, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, জিইসি থেকে একে খাঁন সড়ক, বহদ্দার থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে মেরিনার সড়কে পানির লাইন স¤প্রসারণের কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। মুরাদপুর থেকে পুরো সড়কের মাঝ পথে পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। কমপক্ষে ১০ স্থানে রয়েছে ওয়াসার খননকৃত বড় গর্ত।    

নগরীর প্রবেশমুখ শাহ্ আমানত সেতু হতে বহদ্দার হাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কে চলছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের ছয় লাইনের সড়ক নির্মাণের কাজ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা ভারী যানবাহন ও যাত্রীবাহী চেয়ারকোচগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। সড়কটির রাজাখালী, কালামিয়া বাজার, রাহাত্তার পুল, মাইলের মাথায় দিনভর যানজট লেগে থাকে। সরকারি সংস্থা বিটিসিএল নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে চকবাজার পর্যন্ত, আগ্রাবাদ থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত ভুগর্ভস্থ লাইনের কাজ করার ফলে মূল সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন বলেন, ‘নগরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। আগ্রাবাদ থেকে বড়পোল এক্সেস রোড উঁচু করার কাজ চলছে। একপাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্ষার আগেই রাস্তা উঁচু করার কাজ শেষ করতে চাই। একইভাবে তিন পোলের মাথার কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম দাফের কাজ আমরা কাজগুলো দ্রুত শেষ করবো। তবে উন্নয়ন কাজ চলাকালে হয়তো নগরবাসীর একটু কষ্ট হবে।’

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলমান প্রকল্প। তবে আমরা কাজগুলোর কারণে যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট কম হয় সেদিকে নজর রাখছি।’

মুরাদপুর-লালখান বাজার আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নিচে দুই নম্বর গেইট এলাকায় রাস্তা আমরা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। পূর্বকোণের সামনেও কাজ মোটামুটি শেষ। ওখানেও আমরা রাস্তা পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আশা করি সামনে জনভোগান্তি হবে না।’

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর