১৩ জুন, ২০১৮ ২০:৪২

চট্টগ্রামে ৬ উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও বন্যায় চরম জনদুর্ভোগ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রামে ৬ উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও বন্যায় চরম জনদুর্ভোগ

চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে অন্তত ছয়টি উপজেলায় বন্যার পানির ঢল নেমেছে। বৃষ্টি ও বন্যার পানির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বাসিন্দাদের। ফটিকছড়ি উপজেলায় একজন বন্যার পানির স্রোতে এবং একজন দেয়াল ধসে মৃত্যুবরণ করে। রাউজানের প্রায় সব ইউনিয়ন এখন পানির  নিচে। তাছাড়া রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার  বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানি ওঠা উপজেলারগুলোর বাসিন্দাদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শেষ নেই। পানির স্রোতের কবলে পড়ে মানুষদের চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। ইফতার ও সেহিরির সময় রান্না সময়ই ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

জানা যায়, ফটিকছড়িতে নাজিরহাট পৌরসভার কদল তালুকদার বাড়ির আহমদ ছাফার পুত্র আবু তৈয়ব (৩২) বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যায়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সমশুর দোকান সংলগ্ন রাস্তা থেকে প্রচন্ড পানির স্রোতে ভেসে যায়। 

আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো খোজ মিলেনি। তাছাড়া, বুধবার বিকালে একই উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের শাহনগর গ্রামে মাঠির ঘরের  দেওয়াল ধ্বসে ওয়াজ খাতুন (৮০) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হন। তিনি ওই এলাকার হামিদ আলী মিস্ত্রির বাড়ির মৃত মোহাম্মদ সোলাইমানের স্ত্রী।

স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘আহত অবস্থায় তাকে পাশের ঘরে নিরাপদ স্থানে রাখলেও রাস্তাঘাটে প্রচুর বন্যার পানি থাকায় চিকিৎসার জন্য কোথাও নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’

তাছাড়া ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনসহ ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নারায়ণহাট, ভুজপুর, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, পাইন্দং, লেলাং, রোসাংগিরি, নানুপুর, বক্তপুর, ধর্মপুর, জাফতনগর, সমিতিরহাট, আবদুল্লাপুর, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌর এলাকার হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুর-দীঘি, মাছের খামারের মাছ, মুরগির খামার ও গৃহপালিত পাখি এবং গবাদি পশু। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর যান চলাচলও।

ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, ‘উপজেলার অনেক স্থানে পানি উঠে যায়। বেশিরভাগ ইউনিয়নের সড়কে কোমরপানি। বেশকিছু সড়ক পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে। এর সঙ্গে আছে তীব্র ¯্রােতের টান। ভোররাতে কাঞ্চননগর ইউনিয়নে দ্বীপের মতো একটি বাড়ির গাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আটজনকে। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি।’

এদিকে, রাউজান উপজেলার কাগতিয়া, রুপচান্দ নগর, মগদাই, উরকিরচর, হলদিয়া, ডাবুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠে। রাউজানের কাগতিয়া গ্রামের মোরশেদ বলেন, ‘গত সোমবার থেকে পানি বাড়তে থাকে। গত মঙ্গলবার অতিমাত্রায় পানি ওঠে সব দিকে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন বলেন, ‘রাউজানের বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি উঠায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়ক ছাড়াও অনেক ব্রিজ কালভার্টও ভেঙ্গে গেছে।’

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, ‘বাজালিয়া এলাকায় পানি উঠায় বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে কোন ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। কিছু কিছু বড় গাড়ি চলাচল করলেও ছোট যান চলাচল বন্ধ। উপজেলার আমিলাইশ, চরতি, নলুয়া ইউনিয়নের মানুষ পুরোপুরি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর