১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৯:০২

গ্রেফতার আতঙ্কে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাকর্মীরা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

গ্রেফতার আতঙ্কে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাকর্মীরা

মীর জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন বিএনপি নেতা। থাকেন বিশ্বব্যাংক কলোনিতে। সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে অতীতের কোন মামলা নেই। কিন্তু গত শনিবার রাতে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে না পেয়ে তার ছেলে মীর ফয়সালকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। মীর ফয়সাল ওমরগণি এমইএস কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র। পিতা রাজনীতি করেন বলে এখন ছেলেকেই তার মাশুল দিতে হচ্ছে এই যেন দশা। এমন দশা শুধু জাহাঙ্গীর কিংবা তার ছেলে ফয়সালের নয়, চট্টগ্রাম বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের ছোট-বড় সব নেতাই এখন গ্রেফতার ও মামলার আতঙ্কে রয়েছে বলে জানান নগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি। গত একমাসে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন এই যুবদল নেতা।

নগর বিএনপি ও যুবদল সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন বায়েজীদ থানা যুবদল নেতা মাহাবুব উদ্দিন, ডবলমুরিং থানা বিএনপি নেতা মো. ইলিয়াছ ও তার ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। 

৫ দিন আগে গ্রেফতার করা হয় আকবর শাহ থানা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস ছাত্তার সেলিম, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া গোলাপসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে। 

এর আগে নিজের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুকে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত অভিযোগে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মামলা দায়ের হয়েছে। কয়েকজনকে আবার রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে বলে জানা যায়।

এদিকে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর থেকে শুরু করে প্রথমসারির একেকজন নেতার বিরুদ্ধে গড়ে ডজনের ওপর মামলা রয়েছে। কারো কারো রয়েছে ৩০ এর অধিক মামলা। তেমনি একজন হচ্ছেন নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও নগর বিএনপির যুগ্মসম্পাদক গাজী সিরাজ উল্ল্যাহ। তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির এসব নেতা কোনো কোনোটিতে জামিনে মুক্ত থাকলেও নতুন নতুন মিথ্যা মামলায় যুক্ত করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী অনেক নেতাকর্মী। পুলিশের ভয়ে এখন বিএনপি ও  অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বা বাসায় থাকতে পারছেন না।

নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, আমরা কেউই স্বস্তিতে নেই। হামলা-মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপির সাধারণ সমর্থক থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। যাদের মামলা আছে তাদের যেমন হয়রানি করা হচ্ছে, তেমনি যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অপর যুবদল নেতা শাহেদ আকবর বলেন, নগরীর ভোটকেন্দ্র যতগুলো রয়েছে, সেগুলোতে অতীতে যারা বিএনপির নির্বাচনী দায়িত্বপালন করেছেন এখন তাদের খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কারণ, সামনে নির্বাচনে যারা বিএনপির পক্ষে যেন ভোট কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার মত অভিজ্ঞ কেউ না থাকে সে জন্য এই কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।

নগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছে পুলিশ প্রশাসন। মূলত পুলিশকে এ কাজে ব্যবহার করছে সরকারি দল। তবে বর্তমানে যে হারে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতার করে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে, তা অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। যখন-তখন, যাকে-তাকে গ্রেফতার করে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পুলিশ। বিএনপির কোন নেতাকর্মী কখন আটক হচ্ছে, এই আতঙ্কেই এখন দিন কাটে।

বিডি-প্রতিদিন/ ই-জাহান

সর্বশেষ খবর