১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ২০:২৯

নিজ শহর চট্টগ্রামের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা ছিল আইয়ুব বাচ্চুর

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

নিজ শহর চট্টগ্রামের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা ছিল আইয়ুব বাচ্চুর

চট্টগ্রাম থেকেই গানের জগতে প্রবেশ আইয়ুব বাচ্চুর। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতাঙ্গনের এক মুকুটহীন সম্রাট। ‘পপ সম্রাট’ আজম খানের পর আইয়ুব বাচ্চুকেই এই ধারার কিংবদন্তি শিল্পী মনে করা হয়। সঙ্গত কারণেই এক সময় ঢাকায় পাড়ি জমালেও নিজ শহর চট্টগ্রামের প্রতি ছিল তার অফুরান ভালবাসা। শিকড়মুখী এই জনপ্রিয় শিল্পী সুযোগ পেলেই তাই ছুটে আসতেন চট্টগ্রামে। 

চট্টগ্রাম থেকে যেন আরও আরও আইয়ুব বাচ্চু তৈরি হয়, সেজন্য চট্টগ্রামের কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তাকে নিয়ে নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় উইন্ড অব চেইঞ্জ রেস্টুরেন্টের রুফটপে শুরু করেছিলেন ‘এবি লাউঞ্জ’। 

নিজ নামের সংক্ষিপ্ত রূপে প্রতিষ্ঠিত এবি লাউঞ্জে গত আগস্ট মাস থেকেই সপ্তাহের প্রতি শনিবার রাতে চট্টগ্রামের তরুণ ব্যান্ডশিল্পীদের বসতো আসর। প্রতিটি আসরেই ঢাকা বা ঢাকার বাইরে যেখানেই থাকতেন, অনলাইনে যুক্ত থাকতেন আইয়ুব বাচ্চু। নিজেই এর উদ্বোধন করেছিলেন।

এবি লাউঞ্জের অন্যতম উদ্যোক্তা উইন্ড অব চেইঞ্জ রেস্টুরেন্টের চেয়ারম্যান সামি আহাম্মেদ জানান, জন্মস্থানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই চট্টগ্রামের তরুণ ব্যান্ড শিল্পীদের জন্য কিছু করে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। দীর্ঘ লালিত সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই এবি লাউঞ্জ’। তার শেষ ঠিকানাটাও হবে চট্টগ্রামে। 

শনিবার চট্টগ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নগরীর চৈতন্যগলিস্থ কবরস্থানে মায়ের পাশেই তাকে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর চট্টগ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছেলেবেলার বন্ধু-স্বজন, প্রতিবেশী, শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মী ও মিডিয়ার লোকজন ভিড় করেন নগরীর এনায়েত বাজারস্থ শিল্পীর বাড়িতে। 

তার চাচাতো ভাই সোলাইমান খোকা কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘এতো কম বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল- এটা মেনে নিতে পারছি না। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৩ সালে চির তরুণ রকস্টার পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানীতে। গান গেয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন, অর্জন করেছেন কোটি মানুষের হৃদয়। সে স্বপ্ন দেখতো এবং বলতো- বাংলা গান পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল রূপে দাঁড়াবে, আমরা এখনো সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটছি।’

ছেলেবেলার বন্ধু মোহাম্মদ সাহেদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ব্রীজঘাটে হাজি কলোনিতে কিছুদিন বসবাস করেন আইয়ুব বাচ্চুর বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি মোহাম্মদ ইসহাক। ছোটবেলা থেকেই আইয়ুব বাচ্চু ছিল দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে। চোখেমুখে ছিল স্বপ্নীল চিত্র। সব সময় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সেই স্বপ্ন থেকেই মাত্র সামান্য কিছু টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকা গিয়েছিল। আজ তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সে নেই। আইয়ুব বাচ্চুর খ্যাতি এখন বিশ্বজুড়ে। কম বয়সে মারা যাবে সেটা আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

আইয়ুব বাচ্চুর জ্যাঠাত ভাই আবদুল্লাহ বলেন, গানের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন বাচ্চু ভাই। গিটার জোগাড় করা কঠিন ছিল। প্রায়ই রাত করে বাড়ি ফিরতেন। চাচি ভাত-তরকারি টেবিলের ওপর রেখে দিতেন। দারোয়ানকে কয়েক টাকা বকশিশ দিয়ে গেট খোলাতেন। তারপর সেই ঠাণ্টা ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন।’

তিনি আরও বলেন, ছেলেবেলায় বাচ্চু সাইকেল চালাতে পছন্দ করতেন। স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে অনেক দূরে চলে যেতেন। একবার মোটরসাইকেলে নিয়ে গেলেন পতেঙ্গা সৈকতে। কিন্তু মাঝপথে স্টার্ট বন্ধ। এবার সেই মোটরসাইকেল রিকশায় তুলে গ্যারেজে নিয়ে গেলেন। তিনি ঘুড়ি উড়াতেও ভালোবাসতেন।

তাঁর সঙ্গীত জীবনের বন্ধু শিল্পী সুব্রত বড়ুয়া রনি বলেন, ‘বাচ্চু এভাবে চলে যাবে তা ভাবতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে। ও শিল্পী হিসেবে যেমন বড় মাপের, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিল অসাধারণ। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য, ব্যান্ড সঙ্গীতাঙ্গনের জন্য বিশাল শূন্যতা তৈরি করবে।’

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

সর্বশেষ খবর