৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৭:২২
রেলওয়ের নিরাপত্তা ও সেবা সপ্তাহ

৩৫ নির্দেশনা নিয়ে মাঠে নেমেছে রেল প্রশাসন

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

৩৫ নির্দেশনা নিয়ে মাঠে নেমেছে রেল প্রশাসন

রেলওয়ের নিরাপত্তা ও সেবা সপ্তাহ ঘিরে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধসহ ৩৫ নির্দেশনা নিয়ে মাঠে নেমেছে রেলওয়ে প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া রেলওয়ে সপ্তাহে ব্যাপক কর্মসূচি পালনও শুরু করেছে স্ব স্ব অঞ্চলের দায়িত্বশীলরা। রেল কর্মচারীদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরাপদ ট্রেন পরিচালনা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে রেল প্রশাসন মাঠে কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। 

মঙ্গলবার সেবা সপ্তাহের প্রথম দিনে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি, সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, ডিজি রফিকুল ইসলাম, এডিজি মো. সামসুজ্জামানসহ রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কমলাপুর রেলষ্টেশনে যাত্রীদের সাথে কথা বলেন এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। 

তবে রেলকে আরো গতিশীল ও আধুনিকায়নের কাজের গতি দ্রুতগতিতে যেমনি চলছে, ঠিক তেমনি কাজগুলো বাস্তবায়নে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা ও মনিটরিং এ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সেবা সপ্তাহের অন্যতম দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম) সরদার শাহাদাত আলী।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশের রেলওয়েতে সেবা সপ্তাহ শুরু হয়েছে। সকালে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া সূবর্ণা ট্রেনে যাত্রীদের সেবার বিষয় নিয়ে দায়িত্বশীলরা পরির্দশন করেছেন। একই সাথে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। রেলের উন্নয়নে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামি সেবার মানসহ নানাবিধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে রেলের ভাবমূর্ভি অক্ষুণ্ণ রাখতে এ রেলওয়ে নিরাপত্তা ও সেবা সপ্তাহ-২০১৮” পালনের ৩৫টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে বলে জানান তিনি।

বকুল নামের সূবর্ণা ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, সেবা সপ্তাহে ট্রেনের সুন্দর পরিবেশ দেখে খুবই ভাল লেগেছে। রেল প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাত্রী সেবার মান কেমন হচ্ছে, নিরাপত্তাসহ কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তাও খবরাখবর নিচ্ছে। এমন দৃশ্য ট্রেন যাত্রীদের জন্য প্রতিদিন হলেই দিনের পর দিন ট্রেন যাত্রী বেড়ে যাবে এবং রেলের আয়ও বাড়বে বলে জানান তিনি।   

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়েতে নিরাপত্তা ও সেবা সপ্তাহ পালনকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ দায়িত্ব পালন করবেন। এতে নিরাপত্তার বিষয়ে ১৬ এবং সেবার মান উন্নয়নে ১৯ বিষয়সহ ৩৫ কাজ চলছে। এদের মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তায় ১. অপারেটিং স্টাফদের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাইকরণ, ২. ট্রেন পরিচালনা সম্পর্কিত রেজিস্ট্রার, টিএসআর ও ওপিটিসমূহ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিতকরণ, ৩. লাইন ক্লিয়ার আদান-প্রদানের নিয়মাবলী, ৪. সকল শ্রেণির ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিতকরণ, ৫. রেলওয়ে যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন, ৬. যাত্রী, মালামাল ও রেলওয়ে সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ৭. স্টেশন প্লাটফরম, স্টেশন এলাকা এবং যাত্রীবাহী কোচসমূহের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানি ও বাতির ব্যবস্থা, বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণ প্রতিরোধ করত: আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থাকরণ ৮, রেলওয়ের খাবার গাড়ির পরিবেশিত খাবারের মান নিশ্চিতকরণ ৯, নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিবিধানসমূহের যথাযথ প্রয়োগ এবং স্টেশন, ইয়ার্ড, লেভেলক্রসিং গেটসমূহে নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি যেমন-পটকা, হাতবাতি, হ্যান্ড সিগনাল, প্লাগ, ক্ল্যাম্প, বালতি, সাবল, খুরপি ইত্যাদি মজুদ ও সংরক্ষণ ও নিশ্চিতকরণ। ১০, ট্রাক ও ব্রিজের সুষ্ঠু সংরক্ষণ এবং নিরাপদ ও নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচলের উপযুক্ততা যাচাই, ট্র্যাক ও ব্রিজের সুষ্ঠু সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ ১১, ব্লক যন্ত্রসমূহ, টিসি ফোন, এসটিএস, পিএ সিস্টেম ইত্যাদির কার্যকারিতা, বিভিন্ন ওপিটির সুষ্ঠু ব্যবহার, সংকেতের ব্যবহার ও বিকলতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও কার্যকরভাবে সংরক্ষণ ১২, ইঞ্জিন, ক্যারেজ ও ওয়াগণ ইত্যাদির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তা বিধান, সকল ট্রেনের হোস পাইপ, কাপলিং হুক ইত্যাদির পর্যবেক্ষণ ও যথার্থতা নিশ্চিতকরণ ১৩, রিলিফ ট্রেনের অবস্থা, কর্মক্ষমতা, দ্রুত গন্তব্যে পৌছার সক্ষমতা ১৪, ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিককরণ ১৫, রেল পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় নিয়মাবলী কঠোরভাবে পরিপালন নিশ্চিতকরণ ১৬, থ্রো ট্রেন পাসের ক্ষেত্রে নিয়মাবলী সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিতকরণ।

সেবা সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে ১, স্টেশন এপ্রোচ রোড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ২, স্টেশনের টাইম টেবিল ও ভাড়ার তালিকা আপডেট করা ৩, প্লাটফরম ও ওভারব্রিজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ৪, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, ওয়েটিং রুম, রির্টানিং রুম ও টয়লেট পরিষ্কা-পরিচ্ছন্ন রাখা ৫, চলন্ত ট্রেনে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ৬, যাত্রী অভিযােগের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ ৭,  যাত্রীদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ প্রদর্শন ৮, সকল কর্মচারীর কর্মস্থলে সঠিকসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ৯. বড় স্টেশনগুলিতে অনুসন্ধান ও পালিক এড্রস সিস্টেম সচল ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ১০. স্টেশনে প্রতারক, টিকেট কালোবাজারী ও অন্যান্য অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ১১. স্টেশন ও ট্রেনে রক্ষিত ফাষ্ট এইড বক্স সংরক্ষণ নিশ্চিত করা ১২. ভেন্ডিং শপ, ক্যাটারিং সার্ভিস পরিবেশিত খাদ্যের মান বজায় রাখা ১৩. ট্রেনসমূহের সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করা ১৪. এটেনডেন্টদের পোশাক-পরিচ্ছদ, আতিথেয়তার মান ও গাড়ির ভিতর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ১৫. রাত্রিকালীন যাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষায় রেল পুলিশ এর তৎপরতা বৃদ্ধি করা। ১৬. স্টেশনে অপক্ষমান মহিলা ও শিশু যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে স্টেশনে কর্তব্যরত কর্মচারীগণের সচেতনতা, বড় স্টেশনে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সাহায্যার্থে সিঁড়ি, হুইল চেয়ারে ব্যবস্থা করা। ১৭. মালামাল বুকিং এ কর্মচারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা। ১৮. ইনওয়ার্ড ও আউটওয়ার্ড বুককৃত মালামালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ১৯. যাত্রীদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর