২৩ মার্চ, ২০১৯ ১৮:৫৪

হালদা নদীর মা মাছের দিকে ‘শকুনি দৃষ্টি’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হালদা নদীর মা মাছের দিকে ‘শকুনি দৃষ্টি’

ফাইল ছবি

উপমহাদেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী। এ নদীর প্রাণ মা মাছ। মা মাছ না থাকলে নদীটিই অর্থহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু অতিগুরুত্বপূর্ণ এ মা মাছ নিধনে চলছে প্রতিযোগিতা। লোভাতুর অসাধু ব্যবসায়ীদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ এই মা মাছের দিকে। নির্বিচারে অবাধে কারেন্ট জাল বসানো হচ্ছে এ নদীতে। প্রতিনিয়ত কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না।       

জানা যায়, তিন মাস আগে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী (ইউএন) কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন যোগদানের পর হালদা নদীতে মা মাছ নিধনের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। ইতোমধ্যে হালদা নদী থেকে ৯২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। তাছাড়া ৫টি ড্রেজার আটক, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, একজনকে দুই মাসের কারাদণ্ড, ৫৬ হাজার ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়েছে। তবুও থেমে নেই লোভাতুরদের শকুনি দৃষ্টি। 

যখনই অভিযান, তখনই জব্দ হয় কারেন্ট জাল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও অবৈধভাবে মা মাছ নিধনকারী ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়।

ইউএন মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘হালদা নদী জাতীয় সম্পদ। যে কোনো মূল্যেই এটিকে রক্ষা করতে হবে। আর এ নদীর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো মা মাছে পোনা ছাড়া। তাই মা মাছ রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এমনকি খবর পেয়ে রাত ২টার সময়ও হালদা নদীতে গিয়ে কারেন্ট জাল আটক করি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মা মাছের পোনা ছাড়ার মৌসুম। তাই এই সময়টাতে নদীতে মা মাছগুলোকে পোনা ছাড়ার দূষণমুক্ত প্রয়োজনীয় পরিবেশ দিতে হবে। অন্যথায় হালদা নদীতে পোনা ছাড়ার ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের মত বিপর্যয় ঘটবে। কারণ মা মাছ না থাকলে ডিম কে ছাড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাটহাজারীর ইউএনও নিয়মিত অভিযান চালিয়ে প্রায় এক লাখ মিটার জাল জব্দ করেছেন। ভাবতেও অবাক লাগে, এই জাল যদি হালদা নদীতে বসানো হতো, তাহলে একটি মা মাছও কি থাকত? অথচ এখনই দরকার মা মাছকে পোনা ছাড়ার পরিবেশ দেওয়ার। তাই এখন জরুরি ভিত্তিতে জাল বসানো এবং দূষণ বন্ধ করতে হবে।’  

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৯৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদীটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজান উপজেলায় অবস্থান। কিন্তু বর্তমানে কেবল হাটহাজারী অংশেই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অপর দুই উপজেলা অংশের নদীতে প্রয়োজনীয় অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় সেখানে মা মাছ নিধন, বালি উত্তোলন, দূষণসহ নানা অত্যাচারের কবলে পড়েছে প্রাকৃতিক এ নদীটি। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর