চট্টগ্রাম নগরীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের মিছিল থেকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নগরীতে কয়েকটি পুলিশ বক্স এবং বেশকিছু ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর নিউমার্কেটে বিক্ষোভ শেষ করে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পথে এসব হামলা-ভাঙচুর করা হয়।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষামন্ত্রী ও চসিক মেয়র মহোদয়ের বাসা লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছে। খবর পেয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গেছে। এর আগে মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপির অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নিউমার্কেট থেকে বহদ্দারহাটের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কয়েকটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়। নিউমার্কেট এলাকায় আমাদের সিসি ক্যামেরাগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় বিপুল জনসমাগমের কারণে নিউমার্কেটের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা কার্যত আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়। বিকেল ৩টা থেকে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। আধাঘণ্টার মধ্যেই হাজারো আন্দোলনকারী জমায়েত হয়।
এসময় নগরীর জিপিও মোড়, সদরঘাট মোড়, স্টেশন রোড এবং আমতল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট মোড় অবরুদ্ধ করে রাখে। নিউমার্কেট মোড় ঘিরে ব্যস্ততম চারমুখী সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভস্থল থেকে পুলিশ বক্স ও সিসি ক্যামেরা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে পুরো এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহনশীল হতে দেখা গেছে।
সারাদেশে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে বিক্ষোভ শেষে মিছিল নিয়ে টাইগারপাস, লালখান বাজার হয়ে জিইসি মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। লালখান বাজার আমিন সেন্টার অতিক্রম করে ওয়াসার মোড় যাওয়ার পথে সড়কের বামে পেট্রল পাম্পের পাশে চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা করে মিছিলকারীরা।
এসময় তারা ওই কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অফিসের চেয়ার-টেবিলসহ আরও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। আইটি রুমের কম্পিউটার, টেলিফোন সেট ভাঙা অবস্থায় দেখা গেছে। ঘটনার প্রায় একঘণ্টা পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুকে নিয়ে সেখানে যান। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয় ঘুরে দেখেন।
এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর খুলশী থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকা অতিক্রম করছিল আন্দোলনকারীদের মিছিল। সেখান থেকে শতাধিক লোক চশমা হিলে মেয়র গলিতে ঢুকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা করে। তবে মূল ফটক বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় বাসায় থাকা মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
শিক্ষামন্ত্রীর মা বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বাসায় আক্রমণ হয়েছে। ইট, পাথর মেরে আমাদের বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করেছে। দুইটা গাড়ি বাসার সামনে রাখা ছিল। সেগুলো ভেঙে দিয়েছে।’
এদিকে সাড়ে সাতটার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাট গিয়ে বহদ্দার পুকুর পাড় সংলগ্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনের গেটে হামলা করে। এসময় আন্দোলনকারীরা ভেতর থেকে তালা দেওয়া গেট ভাঙার চেষ্টা করে এবং বাইর থেকে বাসাকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই