চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। নিজ ছেলের ফল জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় এ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নারায়ণ চন্দ্র বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চট্টগ্রামের পরিচালক। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদার স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি চিঠিতে তার বিষয়ে এই তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮’-এর বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মাউশি মহাপরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একই বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিধিমতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। ওই চিঠির নির্দেশনায় বলা হয়— ‘মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে ফল জালিয়াতি তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। এই জালিয়াতিতে তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। আমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করি, আমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রতিপালনে বাধ্য। সাবেক সচিবের ছেলের ফলাফল জালিয়াতির বিষয়ে মন্ত্রণালয় আমাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আমি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। মন্ত্রণালয় জালিয়াতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে বলেছে। আমি আইন উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করে এ মামলা দায়ের করবো।
জানা যায়, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বোর্ড সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে পাশ করিয়েছেন, এমন সন্দেহে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। সে সময় রহস্য উন্মোচনে তদন্ত এবং প্রভাবমুক্ত পুনঃনিরীক্ষণের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সেটিও এক সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। পুনঃনিরীক্ষণ থামাতে গত ৫ নভেম্বর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রতারণা, কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে ছেলেকে জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর মো. আমির হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। গত ৩ জুন কমিটির সদস্যরা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ তদন্তে আসেন। এরপর গত ৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল