১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৬:৩৯

জাবিতে নানা আয়োজনে প্রজাপতি মেলা

নাহিদুর রহমান হিমেল, জাবি

জাবিতে নানা আয়োজনে প্রজাপতি মেলা


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি প্রেমীক আর দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হল “প্রজাপতি মেলা-২০১৫”। ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এ শ্লোগানকে ধারন করে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন চত্তরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যেমে দিনব্যাপী এ মেলার সূচনা হয়। বিভিন্ন প্রকারের প্রজাপতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে ৬ষ্ঠবারের মত ব্যাতিক্রমী এ মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রজাপতি সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির ভূমিকা তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষেই মূলত প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রজাপতি ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন। এসময় তিনি বলেন, জাবি ক্যাম্পাসকে প্রজাপতির আবাস হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ ড. মো. মনোয়ার হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদার রেখেছেন। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের, জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল জব্বার হাওলাদার, আই ইউ সি এন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির ডিন এস এম মাহবুবুল হক মজুমদার প্রমুখ।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পাশে তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত দেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। সেখানে বিশালাকৃতির তিনটি ‘প্রজাপতি হাটে’ অসংখ্য রঙ বে-রঙয়ের প্রজাপতি রাখা হয়। যা দেখে মুগ্ধ হয় দর্শনার্থীরা। এবারের মেলায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারকে (আই ইউ সি এন) ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল আল হায়দারকে ‘ইয়াং বাটারফ্লাই এনথুজিয়াস্ট’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এদিকে শুক্রবার মেলাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল রূপে। মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় প্রজাপতির ছবি সম্বলিত বেনার/ফেস্টুন ঝোলানো হয়। অন্যদিকে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মৃদু শীতকে উপেক্ষা করে ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো প্রজাপতিপ্রেমী, দর্শনার্থীরা এ ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন। মেলায় শিশু কিশোরদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। দিনব্যাপী এ মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতি আদলের ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মেলায় কয়েকটি স্থানে স্থাপনকৃত মশারীর জাল দিয়ে তৈরি প্রজাপতির হাটে নানা রঙের নানা প্রজাতির জীবন্ত প্রজাপতি তুলে ধরা হয়। মেলায় এসব প্রজাপতির সাথে ছবি তুলতে দিনভর ব্যস্ত ছিলো দর্শনার্থীরা।
কুয়াশা ভেজা ভোর জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।  শীত জেঁকে না বসলেও শীতের কাপড় কিনতে দোকানগুলোতে ভীড় করছেন ক্রেতারা। বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে রায়ের বাজার বধ্যভূমি পরিষ্কার করা হচ্ছে।
মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রজাপতি ভালো থাকলে প্রকৃতি ভালো থাকবে, আর প্রকৃতি ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। তাই সবাইকে পরিবেশ ও প্রজাপতি রক্ষায় সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মোট ৩০১ প্রকারের প্রজাপতির মধ্যে এই ক্যাম্পাসে ১১৫ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। এ মেলায় প্রায় একশ প্রজাতির কয়েক হাজার প্রজাপতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম গবেষণা শুরু করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনোয়ার হোসেন। দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষণায় তিনি এ পর্যন্ত ১১৫ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে নতুন ৬৩ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিডি-প্রতিদিন/১১ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর