৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:০২

'ভুলি নাই সেই দিনগুলি'

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

'ভুলি নাই সেই দিনগুলি'

''ভুলি নাই সেই দিনগুলি। ভুলি নাই সে সময়ের কথা। ভুলি নাই এই পুরান শহরকে। আজও মনে পড়ে বিউটি বোডিংয়ের আড্ডার কথাগুলো। যেখানে বসে দল-বল নির্বিশেষে জমে উঠতো মজ-মাস্তি। আর গড়ে উঠতো বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধন।'' এদের মধ্যে অনেকেই নিয়েছেন চিরবিদায়। যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে আবারও ঘটেছে মিলনমেলা। এক সময়ের তাগড়া জোঁয়ান এখন যৌবনের শেষ প্রান্তে এসে বৃদ্ধের কোটাতেও ফিরেছেন আড্ডা, ঠাট্টা, গল্প আর খুনসুটিতে। বন্ধুত্বের বাহারি কথা। বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাঁতারে এসে নিজেদের মতো করে যেন ছেলে বেলায় ফিরেছেন ষাট দশকের সংগ্রামী ছাত্রনেতারা। যারা তারুণ্যে শৌর্যবীর্যে ছয় দফা থেকে গণঅভ্যুত্থান। আর গণঅভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

শুক্রবার পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিউটি বোডিংয়ে ষাট দশকের ঢাকা নগরের সংগ্রামী সতীর্থদের নিয়ে এক মিলনমেলার আয়োজন করেন পুলিশের সাবেক ডিআইজি ফিরোজ কবির মুকুল ও ডা. আব্দুল কাইয়ুম লস্কর।
মিলনমেলায় আগতরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জোড়াজুড়ি, হাতমেলানো, ঠাট্টায় আর গল্পে মেতে উঠেন। অনেকেই দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধুকে দেখে ছিলেন অশ্রু সজল। আবার কারও কারও মাঝে ছিল আগেকার সুন্দর দিনগুলো ফেলে আসার আক্ষেপ। ছিল চিরচেনা মুখগুলোর স্মৃতিচারণে ভরপুর। সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, সরকারের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা, অভিনেতা, নাট্যব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ীদের মিলনমেলায় দিনটিতে ছিল অন্যরকম আমেজ। সিক্ত ছিল বন্ধুত্বের ভালোবাসায়। এদের মধ্যে যারা না ফেরার দেশের চলে গেছেন তাদের রুহের জন্যও করা হয় দোয়া-মাগফিরাত।

ষাট দশকের ছাত্রনেতারা জানান, আমরাই ছিলাম আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সংগ্রামী-বিপ্লবী। আমরাই মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুবন্ধুর ডাকে প্রথম সাড়া দিয়েছিলাম। আর এই ঢাকাকে ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশনের (এনএসএফ) কুকীর্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলাম। সে সময় এনএসএফের ভয়ে সবাই থরথর করে কাঁপতো। আর আমরাই কাঁপিয়ে দিয়েছিলাম এনএসএফকে।

তারা আরও বলেন, মূলত সে সময় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে প্রভাব ছিল ছাত্রলীগ আর ছাত্র ইউনিয়নের। আমরা রাজনীতি করতাম যে যার মতো করে। কিন্তু বিউটি বোডিংয়ে আসলে সবাই এক হয়ে যেতাম। সব কিছু ভুলে ছিল শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দেশের যেকোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলন সংগ্রাম তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) আর কায়দে আজম কলেজ থেকে সূচনা হতো।

স্মৃতিচারণে গায়ক ফকির আলমগীর বলেন, আমাদের সময় রাজনীতিতে ছিল সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতিতে ছিল রাজনীতি। এখন আর সেই ছাত্র রাজনীতি নাই।

অভিনেতা ফারুক বলেন, ষাটের পরপরই মূলত যুদ্ধ শুরু হয় স্বাধীনতার। তখন আমরা ছাত্রলীগের সেনা। এখনকার ছাত্রলীগের কথা বললে তো দুঃখ লাগে। এখনকার ছাত্রলীগ আর তখনকার ছাত্রলীগ কী ছিল। তা আমাদের চেহারার দিকে তাকালেই বুঝা যাবে। আমরা কখনোই অর্থের পিছনে দৌড়াতাম না। আমরা দেশের জন্য কাজ করতাম। আমরাই স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ। চিরকালই থাকবো।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এম.পি বলেন, আমরা যারা ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতি করতাম। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছাত্রলীগে ছিলাম। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছি তাদেরকে নিয়েই আজকের এই মিলনমেলা। আমরা সে সময়েই দেশের জন্য জীবন বাজী রেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের কথা এখন কেউ বলে না। এখন অনেকেই অনেক বড় বড় কথা বলে। এরাই হলো হাইব্রিড নেতা।

আয়োজক কাজী ফিরোজ মুকুল বলেন, গত তিন বছর ধরে এই মিলনমেলা হচ্ছে। ষাট দশকের বিপ্লবীদের নিয়েই এই মিলন। অনেক বিপ্লবী মারা গেছেন। আমার মৃত্যুর পরও যেন আমার বন্ধুরা এটা চালিয়ে নেয় এটাই আমার কামনা।  

মিলনমেলায় আগতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- অ্যাডভোকেটে কাজী ফিরোজ রশীদ এম.পি, গাজী গোলাম দস্তগীর এম.পি, নুরুল মজিদ হুমায়ুন এম.পি, রহমত উল্লাহ এম.পি, সাবেক এম.পি সুলতান টুটু, যুবলীগের সাবেক নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান, অভিনেতা ফারুক, প্রবীর মিত্র, পীষূষ বন্দোপাধ্যায়, ফকির আলমগীর, আপেল মাহমুদ, রতিন্দ্রনাথ রায়, আলমগীর শিকদার লোটন, মতিউর রহমান মতি, মো. মুজিবুর রহমান হিরু, আব্দুর রহমান, মোসতাক হোসেন খান জুয়েল, লুৎফর রহমান খান, মৃণাল কান্তি রায়, নারায়ণ চন্দ্র মালাকার, মো. শফিউদ্দিন আহমেদ, জিয়াউল হক, রফিকুল আনাম খান মিঠু, নুরুল হোসাইন নুরা, জহির উদ্দিন মো. বাবর, ওবায়দুল কবির খান বাচ্চু, মোফাজ্জল হোসেন বিধু চৌধুরী, কামরুল আলম খান খসরু, মো. লুৎফর মানিক, কে এম সাইফুদ্দীন আহমেদ, বাবু আনসারি ও খসরু খান প্রমুখ।


বিডি-প্রতিদিন/০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর