১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১১:৩৮

চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে বেঁধে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে বেঁধে নির্যাতন

মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে রাজশাহীর পবায় ঘরের মধ্যে জাহিদ (১৫) ও ইমন আলী (১৩) নামের দুই কিশোরকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে ভিডিও করার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবারের বিকালের এ ঘটনায় শনিবার রাতে পবা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন জাহিদের বাবা। এরপরই বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে।

ওই মামলায় রবিবার ভোরে উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রাম থেকে আজিজুর রহমান (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পবা থানার ওসি শরিফুল ইসলাম।

জাহিদ হাসান পবার চৌবাড়িয়া এলাকার ইমরান আলীর ছেলে এবং পার্শ্ববর্তী বাগসারা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। আর ইমনের বাবার নাম মাসুদ রানা। তবে তার বাবা-মা বেঁচে নেই। এখন সে দাদা মকবুলের বাড়িতে থাকে।

আহত দুই কিশোরের মধ্যে জাহিদ হাসানকে পবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। আর আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে ইমন।

সিলেটে শিশু রাজন ও খুলনায় রাকিব হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে বিচার শেষ হওয়ার তিন মাসের মাথায় নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটল।

জাহিদের বাবা ইমরান আলী জানান, তার ছেলে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে নানার বাড়ি বায়ার বিরস্তলে  বেড়াতে যাচ্ছিল। এসময় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক বিমানবন্দর এলাকা থেকে জাহিদ হাসানকে ধরে নিয়ে যায় চৌবাড়িয়া গ্রামের পলাশ, নাসির উদ্দিন, জামাল, রাজ্জাক, অনিক ও তুহিনসহ কয়েকজন যুবক। পরে তারা ফজলুর বারির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে বিছানায় ফেলে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে জাহিদকে নির্যাতন করে। রাত ১০টা পর্যন্ত তার ওপর চলে মোবাইল চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য মারপিট। নির্যাতনের ওই দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত জাহিদ মোবাইল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাবা ইমরানকে ডেকে তার হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ইমরান আলী গুরুতর আহত ছেলেকে নিয়ে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

তবে এ ঘটনাটি যেন কাউকে না জানানো হয়, এর জন্য জাহিদের পরিবারকে নির্যাতনকারীদের পক্ষ থেকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়। ফাঁকা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেন ফজলুর বারির ছেলে রাকিবসহ অন্য নির্যাতনকারীরা।

আহত জাহিদ হাসান অভিযোগ করে জানায়, শুক্রবার সকালে ফজলুর বারির ছেলে রাকিবের একটি মোবাইল চুরি হয়। ওই চুরির ঘটনায় এলাকার ইমন নামের ১২-১৩ বছরের এক শিশুকে ধরে নিয়ে যায় ফজলুর বারির পরিবারের লোকজন। এরপর তারা ইমনকে মারধর করে। ইমন তখন ওই মোবাইল চুরির সঙ্গে জাহিদও জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দেয়। এরপর তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ফজলুর বারির লোকজন মারপিট করে।

জাহিদের বাবা ইমরান আলী অভিযোগ করেন, জাহিদকে নির্যাতনের পর থেকে নাসির এবং তাদের লোকজনের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে থানায় বা অন্য কোথাও অভিযোগ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সকালে আজিজুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।

বিডি-প্রতিদিন/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর