২৫ জুন, ২০১৬ ১৬:৫৩

বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মহাশ্মশান দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক,বগুড়া:

বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মহাশ্মশান দখলের অভিযোগ

বগুড়ার শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা শ্মশানঘাঁট দখলে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিবগঞ্জ উপজলোর বানাইল মৌজার করতোয়া নদীর ধার ঘেঁষে গড়ে ওঠা মহাশ্মশানটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মৃতদেহ সৎকার করে আসছিল। উপজেলা অাওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক ক্ষমতার দাপটে শ্মশানঘাঁটের ৪ শতক জমিতে মাটি ফেলে দখলে নিয়ে সেখানে ভবন নির্মানের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এঘটনার প্রতিবাদে উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শ্মশানঘাঁট রক্ষার দাবীতে আজ ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা বলেন, ১৯১০ সাল থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জের বানাইল মৌজার করতোয়া নদীর ধার ঘেঁষে এ মহাশ্মশানটিতে মৃতদেহের সৎকার চলে আসছে। এটি জমিদার পত্মী নগেন্দ্র্র বালার নামীয় সিএস ৮৭ দাগের সম্পত্তি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মৃতদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অথবা মাটিতে গর্ত করে সমাধিস্থ করার শাস্ত্রীয় বিধান রয়েছে। বানাইল মহাশ্মশানে উভয় পন্থাতেই মৃতদেহের সৎকার করা হয়ে আসছে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ওই সম্পত্তি সনাতন ধর্মের জনসাধারণ ব্যবহার করে আসছে। সিএস-এমআরআর এবং সর্বশেষ মাঠ জরিপও তা বহাল আছে। 

কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক মহাশ্মশানের উত্তর পাশের বেশ কিছু এলাকা জুড়ে মাটি ফেলে ভরাট করে দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। প্রায় ৪ শতক জায়গা জুড়ে তিনি মাটি ভরাট করেন। মাটি ভরাটের পর সেখানে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। 

মহাশ্মশার দখল মুক্ত করতে বানাইল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির আয়োজনে শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত একঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিতে বানাইল পৌর এলাকা ছাড়াও আঁচলাই, উথলী, সংসারদিঘি, পরানপুর, ভাইয়ের পুকুর, বামনা এলাকার শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুর রহমানের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। 

স্মারকলিপিতে অবিলম্বে প্রশাসন তাঁদের মহাশ্মশান পুরোপুরি উদ্ধার করে না দিলে এলাকার সকল হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষ প্রয়োজনে এ এলাকা ত্যাগে বাধ্য হবেন এবং কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন। 

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ন কানু, সাধারণ সম্পাদক শিশির সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রহলদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র অধিকারি, বানাইল কেন্দ্রীয় বারোয়ারী শিবমন্দির ও শ্মশান সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ মোহন্ত, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার, প্রবীণ সাংবাদিক রতন কুমার রায়, বগুড়া জেলা হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক গৌরব চন্দ্র দাস, ব্যবসায়ী অদ্বৈত কুমার মোহন্ত গোপাল চন্দ্র মোহন্ত, সাধন কুমার দত্ত, মিলন মোহন্ত, রাজ কুমার কানু, অখিল কুমার সরকার, সমর কুমার মোহন্ত অধির কুমার দেব, বিপ্লব মোহন্ত সুবীর কুমার দত্ত প্রমুখ। 

বানাইল কেন্দ্রীয় বারোয়ারী শিবমন্দির ও শ্মশান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার জানান, করতোয়া নদীর পাশে ২৫ শতক জমিতে প্রাচীন এ মহাশ্মশানটিতে দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে। ১৯১০ সালে এটি প্রচলন হয়।  শ্মশান সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র আমাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক মহাশ্মশানে মাটি ফেলে ভরাট করে দখল নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। তিনি অবিলম্বে মহাশ্মশানের দখল প্রক্রিয়া বন্ধ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, করতোয়া নদীর ঘাট পাকাকরণ এবং সড়কবাতি স্থাপনের দাবি জানান।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক জানান, তিনি কাগজমুলে শ্মশানের পাশে ৪ শতক জায়গা ক্রয় করেছেন। তিনি দাবী করেন শ্মশানের কোন জায়গা দখল করা হয়নি। যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। 


বিডি প্রতিদিন/২৫ জুন ২০১৬/হিমেল-০৬

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর