২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ২০:৩৭

সদস্য পদে আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলার আশংকা চট্টগ্রামে

জেলা পরিষদের নির্বাচনে ১৫ ওয়ার্ডে ৭৪ প্রার্থী

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

সদস্য পদে আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলার আশংকা চট্টগ্রামে

চট্টগ্রামের জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদের প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিশৃংখলা শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে দূরে থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেই একের অধিক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১৫ ওয়ার্ডে সর্বমোট ৭৪ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে সাধারণ ও সংরক্ষিত পাঁচটি ওয়ার্ডে সদস্য পদে মাত্র একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) নেতা নারায়ন রক্ষিত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের পাঁচ ওয়ার্ডে একজন করে সদস্যদের মধ্যে ১ নাম্বার ওয়ার্ডে (মীরসরাই-বারৈয়ারহাট) শেখ আহমদ, ৭ নম্বর (রাউজান) ওয়ার্ডের কাজী আব্দুল ওহাব, ৮ নম্বর (রাঙ্গুনীয়া) ওয়ার্ডে  কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ১২ নম্বর (আনোয়ারা-বাঁশখালী আংশিক) ওয়ার্ডের এস এম আলমগীর এবং সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দিলুয়ারা ইউসুফ। তবে একের অধিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা না থাকায় নিয়মানুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলার নির্বাচন কর্মকর্তারা।

বাকি ওয়ার্ডগুলোতে আওয়ামী লীগের একের অধিক মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের গ্রুপিং, দলাদলিতে কেউ কাউকে ছাড় না দেয়ার মানসিকতায় বেশি সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সদস্য নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে মনোমালিন্য, গ্রুপ-উপগ্রুপ, কোন্দলের কারণেই এত বেশি প্রার্থী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও জেলা আওয়ামী লীগ কোন ধরনের হস্তক্ষেপ না করলে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেই জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে জানান তৃণমূলের নেতারা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভার নেতারা স্থানীয়ভাবে বসেই একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন শেষ করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এতে দলের কর্মকান্ড বিরোধী কেউ জড়িত থাকলে সংগঠনের নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম বলেন, সদস্য পদে একের অধিক ফরম জমা দিয়েছেন। সদস্য পদে দলীয় কোন নির্দেশনা না থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলের অনেকেই সদস্য ফরম জমা দিয়েছেন। তবে দল থেকে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান পদেই একক প্রার্থী মনোনীত করেছেন সারা দেশে।

জানা যায়, সদস্য পদে হাটহাজারী থেকে সদস্য পদে আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন শাহ ও যুবলীগ নেতা জাফর আহমেদ মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। একইভাবে অন্য ওয়ার্ডেও দলীয় একাধিক নেতা সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

সদস্য প্রার্থী ও উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিন শাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দলের সাথে কাজ করে আসছি। অনেক জুলুম, নির্যাতন, হামলারও শিকার হয়েছি। আশা করছি সবকিছু বিবেচনা করে যোগ্যপ্রার্থীদের ভোটাররা মূল্যায়ণ করবেন।

সন্দ্বীপ ও সাতকানিয়ার দুইজন প্রার্থী বলেন, প্রার্থী যত বেশি হবে তত নির্বাচনী আমেজ বাড়বে। নির্বাচনী আমেজ টিকিয়ে রাখার জন্য দলের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপ না করা উচিত। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনী মাঠে নেই, এরমধ্যে আওয়ামী লীগও একক প্রার্থী দিলে এ নির্বাচনের কোন মূল্য থাকবে না। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক, কি হয়। তবে অনেকেই মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে পড়তে পারেন বলেও তারা জানান।

চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের ১৫ সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৮ জন প্রার্থী এবং ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৬ জন মহিলা প্রার্থী তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এদের মধ্যে সাধারণ ১ নম্বর ওয়ার্ডে শুধুমাত্র ১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড ৭ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ জন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২ জন মহিলা সদস্য প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ৩ ও ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ ডিসেম্বর। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হবে ১২ ডিসেম্বর। ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


বিডি প্রতিদিন/২ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর