২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:৫৪

কীর্তনখোলায় ডুবে যাওয়া কার্গো উদ্ধারের সক্ষমতা নেই বিআইডব্লিউটিএ'র

৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রশাসনের

রাহাত খান, বরিশাল

কীর্তনখোলায় ডুবে যাওয়া কার্গো উদ্ধারের সক্ষমতা নেই বিআইডব্লিউটিএ'র

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ভাঙ্গারমুখ সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে দুটি নৌযানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই কার্গো কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ অর্ধনিমজ্জিত ওয়াটারবাস এমভি গ্রীন লাইন-২ কোনটি-ই উদ্ধারের সক্ষমতা নেই নৌ চলাচল নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ’র। অর্ধ নিমজ্জিত গ্রীন লাইন-২ এর ওজন ৬শ’ ৪৫ টন। আর সাড়ে ৫শ’ টন কয়লাসহ ডুবে যাওয়া কার্গো এমভি মামুন-মাসুদ-১ এর ওজনও প্রায় ১ হাজার টন। 

বরিশালে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিকের উত্তোলন ক্ষমতা আড়াইশ’ টন। সে ক্ষেত্রে চাঁদপুরে থাকা একই ক্ষমতা সম্পন্ন বিআইডব্লিউটিএ’র অপর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় বরিশাল এনেও দুটি জাহাজ দিয়ে একযোগে ডুবে যাওয়া কার্গো কিংবা অর্ধ নিমজ্জিত গ্রীন লাইন-২ উদ্ধার করার ক্ষমতা নেই বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের উপ-পরিচালক উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিকের কমান্ডার মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, কর্গোর মালিক পক্ষের কেউ তদের সাথে যোগাযোগ করেননি। গ্রীন লাইন-২ কর্তৃপক্ষ ওয়াটার বাসটি উদ্ধারের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলো। শনিবার বিকেলে দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি দল সেখানে গিয়েছিলো। কিন্তু নির্ভিকের উত্তোলন ক্ষমতার চেয়ে গ্রীন লাইন-২ এর ওজন বেশী হওয়ায় সেটা উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে অর্ধ নিমজ্জিত নৌযানটি যাতে পুরোপুরি ডুবে না যায় সেজন্য রশি দিয়ে গ্রীন লাইন-২ গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। সেটি এখন আর ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। উদ্ধার অভিযান বাতিল করে রবিবার দুপুরে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক বন্দরে ফিরে এসেছে। 

এমভি গ্রীন লাইনের সহকারী ব্যবস্থাপক অনিক হাসান জানান, নৌযানটি উদ্ধারে তারা বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে তারা সহায়তা চেয়েছিলেন। তারা জানিয়েছে, গ্রীন লাইন-২ উদ্ধারের সক্ষমতা তাদের নেই। এখন কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নৌযানটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রীন লাইন-২ বরিশালের কোন একটি ডকইয়ার্ডে মেরামত হতে পারে বলে তিনি জানান।

গ্রীন লাইন-২ দুর্ঘটনাকবলিত হলেও একই রুটের এমভি গ্রীন লাইন-৩ দিয়ে বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। রবিবার সকাল ৮টায় গ্রীন লাইন-৩ ঢাকা থেকে ছেড়ে দুপুরে বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছে। এখান থেকে আবার যাত্রী নিয়ে বিকেল ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে গ্রীন লাইন-৩। 

এদিকে ডুবে যাওয়া কার্গো উদ্ধারে মালিক পক্ষের কোন তৎপরতা না থাকায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে বরিশাল হয়ে সারা দেশের নৌ চলাচল। কারন চরবাড়িয়ার ভাঙ্গার মুখ সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর যে স্থানে কার্গোটি ডুবে গেছে সেটিই মূল খাড়ি বা চ্যানেল। আর চ্যানেলের ওই স্থানটি ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলের টার্নি পয়েন্ট। এতে নৌ চলাচলে একটু সমস্যা হতে পরে। কার্গো ডুবির পর এই চ্যানেল দিয়ে চলাচলকারী সকল বড় নৌযানকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কীতনখোলা নদীতে ডুবে থাকা কার্গোর দুই প্রান্তে দুটি স্প্যারিক্যাল বয়া (র‌্যাক বয়া) দেয়া হয়েছে। 

বরিশাল নদী বন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, ডুবে যাওয়া কার্গোর উপরে নদীতে ভাটির সময় ১৯ ফিট গভীরতা (ড্রাফট) রয়েছে। কিছুটা সমস্যা হলেও নৌযানগুলোকে সাবধানে ওই টার্নিং পয়েন্ট অতিক্রমের জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। 

অপরদিকে কীর্তনখোলা নদীতে দুটি নৌযানের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকির হোসেনকে প্রধান এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশের একজন প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিএ’র একজন প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য করে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। 

জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামান জানান, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নিয়ে দুর্ঘটনার কারন, কারো অবহেলা ছিলো কি না এবং আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেবেন। 

বরিশাল নদী বন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু বলেন, দিনের বেলা আকাশ ছিল পরিষ্কার, নৌপথও ছিল স্বাভাবিক। কারও না কারও অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বিআইডব্লিউটিএ। 

গত শনিবার বিকেল ৩টায় ৪ শতাধিক যাত্রী নিয়ে গ্রীন লাইন-২ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো। কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া ভাঙ্গারমুখ মোড় অতিক্রমকালে বিপরীতমুখী কয়লা বোঝাই একটি কার্গোর সাথে মুখিমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কার্গোটি তাৎক্ষণিক ডুবে যায়। কার্গোতে থাকা ৬ শ্রমিক-কর্মচারী সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়। দুর্ঘটনায় গ্রীন লাইন-২ এর সামনের অংশ বিধ্বস্ত হয় এবং তলানী ফেটে ভেতরে পানি ঢুকে একদিকে কাত হতে থাকে। এ অবস্থায় নৌযানটি চালিয়ে নদীর তীরে ঠেকিয়ে দেয় মাস্টার। স্থানীয়দের সহায়তায় যাত্রীরা তাড়াতাড়ি নেমে যাওয়ায় কোন প্রানহানি হয়নি। পরে বরিশাল নদী বন্দরে নোঙ্গর করে থাকা এমভি সুন্দরবন-১২ নামে একটি লঞ্চযোগে আটকে পড়া যাত্রীদের বরিশাল নদী বন্দরে পৌঁছে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।


  
বিডি-প্রতিদিন/২৩ এপ্রিল, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর