২৪ এপ্রিল, ২০১৭ ১৭:৫৪

দায়িত্ব পালনে কর্মকর্তাদের অনীহা, ঝুঁকিপূর্ণ ১১০ কেন্দ্র!

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

দায়িত্ব পালনে কর্মকর্তাদের অনীহা, ঝুঁকিপূর্ণ ১১০ কেন্দ্র!

অবশেষে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত বাশঁখালীর ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। কয়েক দফায় উচ্চ আদালতের স্থগিত হওয়া ১৪টি ইউনিয়নের ১৩৫টি ভোট কেন্দ্রের ১১০টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এবারের নির্বাচানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ৭২ জন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১৩০ জন এবং সাধারণ আসনে ৫৬২ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাছাড়া বাশঁখালীর সরল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে বুলবুলি দাশ বিনা প্রতিন্ধীতায় নির্বাচিত হওয়ায় এখানে নির্বাচন হবে না বলে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, স্থগিত হওয়া বাশঁখালীর এ ইউপি নির্বাচন ইস্যু নিয়ে স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান কর্তৃক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনাটি মামলা পর্যন্ত ঘরিয়েছে। কিছুদিন আগে কাথারিয়া ও পুকুরিয়া ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। সবমিলিয়ে বাশঁখালীর এ নির্বাচনে যেমনি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে, ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দিপনাও দেখা দেয়। তবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো মুনির হোসাইন খান। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে আতংকে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র ও রিটানিং অফিসারের কাছে আবেদন করেছেন ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে মিউচুয়াল ট্রান্সফার দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুষ্ঠু ও শংকামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বাধ্য করছেন বলেও সূত্রে জানা যায়।

অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদ বলেন, বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা অহেতুক ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য মাঠে টহল দিচ্ছে বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও আনসারের নেতৃত্বে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রয়েছে দুই হাজার পুলিশ, দুই শতাধিক আনসার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রতি ইউনিয়নে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে থাকবে টহল পুলিশ। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৫ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ১৩৫ জন প্রিজাইডিং, ৭৫৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং, ১ হাজার ৫১২ জন পুলিং কর্মকর্তা। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৯ হাজার ১শ ৫৮ জন।

নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের মতো গত বছরের ৪ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এর তিনদিন আগে (১ জুন) স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামের মধ্যে অনাকাংখিত ঘটনার জেরে গত ২ জুন নির্বাচন স্থগিত। তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করে নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে। এরপর গত ১২ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ধার্য করা হয়। তাও ১০ নভেম্বর উচ্চ আদালতে এক প্রার্থীর দায়ের করা মামলায় স্থগিত হয়। এরপর ১৯ নভেম্বর ধার্য হলে পরে তাও স্থগিত হয়। এরপর চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়। প্রচার-প্রচারণা ও প্রশাসনিক যাবতীয় ব্যবস্থাও গৃহীত হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন ও জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা প্রার্থীদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকও করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতে কয়েকজন প্রার্থীর মামলায় তাও ১২ এপ্রিল স্থগিত হয়ে যায়। আবার কয়েকজন প্রার্থী উচ্চ আদালতে আপীল করে ওইসব স্থগিতাদেশ বাতিল করে দেন। সেই  প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। এতে বর্তমান নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে সাতকানিয়া উপজেলার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শেখ ফরিদকে অতিরিক্ত নির্বাচনী দায়িত্ব দিয়ে গত ১৮ এপ্রিল বাঁশখালীর নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর