২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ১৮:২৫

'রসদ আনতে নৌ-পথও ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের'

সাভার প্রতিনিধি

'রসদ আনতে নৌ-পথও ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের'

প্রতীকী ছবি

সাভারের রাজফুলবাড়ীয়া বাসস্ট্যান্ডের একটি বাস থেকে তালিকাভুক্ত জঙ্গি তামিম দ্বারীসহ আরও দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, প্লাস্টিক বিস্ফোরকসহ আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদি, চাপাতি, ফোল্ডিং চাকু ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো, ধর্মান্তরিত তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরি ওরফে আমীর হামযা ওরফে আল হুযাইফা ওরফে শ্রী গৌরাঙ্গ কুমার মন্ডল (৩২), কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরউদ্দিন (২৬) ও মো. মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)। 

শুক্রবার র‌্যাবের কাওরান বাজারের র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানান, নিরাপদে রসদ আনতে দেশের নৌ-পথ ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। এজন্য তারা টার্গেট করেছিল আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী জাহাজে কর্মরত ব্যক্তিদের। টার্গেট অনুযায়ী, কয়েকজনকে নব্য জেএমবিতে ভেড়াতেও সক্ষম হয়েছিল জঙ্গিরা।

মুফতি মাহমুদ বলেন, তামীম দ্বারী একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। সে নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা তামীম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিল। তামীম দ্বারী ২০০৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এরপর সে তাবলীগ জামায়াতে যেত। তাবলীগে গিয়ে পরিচয় হয় তানভীর কবিরের সঙ্গে। তানভীর তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং তার বাবা তামীমকে পালক সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ২০০৭ সালে পড়াশোনা শেষ করে। মেরিন একাডেমি থেকে পাস করার পর ২০১০-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলিসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করেন। একই জাহাজে একাডেমিক জুনিয়র আবু বক্করও কর্মরত ছিল। ২০১৩ সালে ‘বাংলার কাকলি’ জাহাজ নিয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার সময় বিশ্বে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে একজন মুসলিম হিসেবে তার করনীয় কি সে বিষয়ে আবু বক্করের সঙ্গে তার আলোচনা হয়। আবু বক্কর তখন জিহাদের কথা বলে। এরপর তামীম জিহাদ সম্পর্কে আগ্রহী হয়। ওই বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে আবু বক্কর মিরপুর ১১ নম্বরে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে তামীম দ্বারীর পরিচয় করিয়ে দেয়। সেই সময় তামীম চৌধুরী তাকে সশস্ত্র জিহাদের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে। 

তিনি আরও বলেন, ‘তামীম চৌধুরীর সঙ্গে ২০১৪ সালে জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তামীম দ্বারীর দেখা হয়। এসময় তামীম দ্বারী জঙ্গি নেতা তামীম চৌধুরীকে বাংলার দূত জাহাজ ঘুরিয়ে দেখায়। তখন তামীম চৌধুরী নৌ-পথে পরিবহনের জন্য বিশ্বস্ত লোকের প্রয়োজনের কথা বলে। যাতে বিদেশ থেকে তাদের মাধ্যমে নাশকতার রশদ আনা যায়। এরপর তারা ভুয়া পাসপোর্ট, ভিসা তৈরি করে তাদের মানসিকতার তরুনদের জাহাজে চাকরি দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ২০১৪ সালে মাঝামাঝিতে তামীম চৌধুরীর সঙ্গে ফের মিরপুরের একটি বাসায় দেখা করে তামীম দ্বারী। সেখানে মীর ফরহাদ, আশরাফ, হিমেল, আব্দুল্লাহ, আবু বক্কর এবং অজ্ঞাত আরও ২/৩ জন জঙ্গি ছিল। তখন দেশের ভেতরে নাশকতার পরিকল্পনা করে তারা। এর কিছুদিন পর তামীম দ্বারীর পতেঙ্গার বাসায় যায় তামীম চৌধুরী। ২০১৫ সালের জুলাইতে তামীম দ্বারী আইএমটিএ-তে ভর্তি হয়। এসময় তামীম চৌধুরীর সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার দেখা হয়। তামীম দ্বারী জঙ্গিবাদে তার সংশ্লিষ্টতা গোপন করতে পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে ২০১৬ সালের আগস্টে বসুন্ধরা-৪ জাহাজে যোগ দেয়। ওই বছরের নভেম্বরে সে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সে হিজরতের উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে।’ 

তার দুই সহযোগী কামরুল হাসানের বাবা বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত। তার বাবা বিডিআরের হাবিলদার ছিল। তার সাত বছরের সাজা হয়েছে। মোস্তফা মজুমদার ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশে কুমিল্লা জেলায় কর্মরত ছিল। সেও হিজরতে ছিল। মুফতি উসমান ও জনৈক ডা. ইকবালের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব।

 


বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ এপ্রিল, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৫

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর