৩০ এপ্রিল, ২০১৭ ১০:৪৪

অগ্রগতি নেই আতিয়া মহল মামলার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট:

অগ্রগতি নেই আতিয়া মহল মামলার

আতিয়া মহলে আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও অভিযান চলাকালে অদূরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পেরিয়ে গেছে এক মাস। এ দীর্ঘ সময়েও আতিয়া মহলে অভিযান কিংবা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। এ দুই ঘটনায় পুলিশের হাতে কোন ক্লুও নেই। এমনকি আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের ‘অপারেশন টোয়াইলাইটে’ নিহত চার জঙ্গির পরিচয়ও শনাক্ত হয়নি। বোমা বিস্ফোরণে আহত চার ব্যক্তি এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এদিকে, আতিয়া মহল বিধ্বস্ত এক ভবন হিসেবেই এখন দাঁড়িয়ে আছে।

সিলেট মহানগর পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান এবং অভিযান চলাকালে অদূরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। গত এক মাসে এসব মামলায় উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। দৃশ্যমান কোন ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ। আতিয়া মহলে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চলাকালে প্রায় আড়াইশ’ গজ দূরে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ কারা ঘটিয়েছে, তাও উদঘাটন করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। আতিয়া মহলে অভিযান শেষ হওয়ার পরই মৌলভীবাজারে দুটি বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়। তন্মধ্যে মৌলবীবাজার সদরের বড়হাটে অভিযানে নিহত এক ব্যক্তি সিলেটে বোমা হামলায় জড়িত ছিল বলে ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তির সাথে আর কারা জড়িত ছিল, নেপথ্যে কারা কলকাঠি নেড়েছে, কোন উদ্দেশ্যে ওই বোমা হামলা করা হয়- এসব বিষয়ে গত এক মাসেও কোন ক্লু পায়নি পুলিশ।

সূত্র জানায়, আতিয়া মহলে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত চার জঙ্গির পরিচয়ও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ চার জঙ্গিকে দাফনের আগে তাদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা। এছাড়া আতিয়া মহলের পাওয়া বিস্ফোরক ও আলামত উদ্ধার করে বিস্ফোরক অধিদফতরে পাঠানো হলেও তার প্রতিবেদনও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ জানায়, বোমা হামলা মামলার ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। হামলায় আহত চার ব্যক্তি এখনও ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তন্মধ্যে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই গ্রামের ফারুক মিয়ার এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ভাটিপাড়া গ্রামের শিরিন মিয়া নামের আরেক ব্যক্তির পাও কেটে ফেলা হতে পারে। এছাড়া গত রবিবার শামীম নামের আহত এক ব্যক্তির পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। আহত এসব ব্যক্তিরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তাদের বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বিস্ফোরণ আর গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া পাঁচ তলা আতিয়া মহল এখন বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আতিয়া মহলে যেসব ভাড়াটে ছিলেন, তাদের সবাই অভিযান শেষের পর অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে ভবনটি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা বলেন, আতিয়া মহলের মামলা দুটি সিআইডি বা পিবিআই তদন্ত করুক, এমনটা চাইছি আমরা। এজন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আবেদন করা হয়েছে।

আতিয়া মহল ঘিরে গত ২৩ মার্চ দিবাগত রাত থেকে শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে ওই বাড়ি ঘিরে রাখা হয়। পরদিন বিকেলে পুলিশ, র‌্যাবের সাথে যোগ দেয় সোয়াট টিমের সদস্যরা। ২৫ মার্চ সকাল থেকে ভবনে অভিযান শুরু করে সেনা প্যারাকমান্ডোরা। অভিযান চলাকালে ওইদিন সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের প্রায় আড়াইশ’ গজ দূরে প্রচ- শব্দে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। এর কিছু সময় পর আরেক দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আরো তিন জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর