ঘরে পানি, বাইরে পানি। রাস্তায়ও পানি আর পানি। পচা নোংরা পানিতে অতিষ্ঠ জীবন ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা (ডিএনডি) বাসীর। পানি প্রবাহের পর্যাপ্ত জায়গা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি ঘর, কলকারখানা নির্মাণ, পানি নিষ্কাশন খালে সরাসারি শিল্প ও আবাসিক বর্জ্য, কোথাও কোথাও পানি নিষ্কাশন খাল অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় এবং ৫০ বছরের পুরোনো পাম্প দিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে ডিএনডিবাসী।
এতে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ডিএনডিবাসীর। ডিএনডি পাম্প হাউস কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি আর বৃষ্টি না হয় তাহলে, ১০/১৫ দিনের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে। তবে বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন করা প্রয়োজন। কিন্তু ৩টি পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। তাও ৫০ বছরের পুরোনো পাম্প হওয়ায় অনেকটা অকেজো হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর মেরামত করে জোরাতালি দিয়ে পাম্প চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ জলাবদ্ধতা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে হলে, এলাকা ভিত্তিক পাম্প স্থাপন করে পানি নিষ্কাশন করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
জানা যায়, ১৯৬৫-৬৮ সালে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) ইরিগেশন প্রজেক্ট চালু হয়। ৩২ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধের (ডিএনডির) অভ্যন্তরে শুষ্ক মৌসুমে সেচ প্রদান এবং বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য সেচ খাল ৯টি, ডিটিও খাল ৯টি, আউট লেক খাল এবং ১০টি নিষ্কাশন খালসহ এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইনটেক খাল ও ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেইন ক্যানেল টার্ন আউট খাল রয়েছে। এসব খাল দিয়ে জমিতে সেচ দেয়া ও পানি নিষ্কাশনের জন্য শিমরাইল পাম্প হাউজে প্রতিটি ১২৮ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি পাম্প থাকলেও ১টি অকেজো। এছাড়াও ছোট ৫ কিউসেক ২২টি পাম্প থাকলেও মাত্র ৫টি পাম্প সচল রয়েছে বলে জানা গেছে।গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং বেদখল হওয়া নিষ্কাশন খালে পানি না যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। এর ফলে আষাঢ়ের মাঝামাঝিতে জলাবদ্ধতা আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশংকা করছেন ডিএনডি বাসিন্দারা।
ভুক্তভোগীরা জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, কলকারখানা, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা নির্মিত হওয়ায় ডিএনডিবাসী প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হচ্ছে। ডিএনডির অভ্যন্তরের বসত-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটে বর্ষায় জমে থাকা ময়লা ও নোংরা পানি প্রধান নিষ্কাশন খালে যেতে না পারায় এসব এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছে। এতে অনেকেরই আবার নানা রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।
গত কয়েকদিন সরেজমিনে ডিএনডির অভ্যন্তরে ফতুল্লার রামার বাগ, সস্তাপুর, গাবতলা, কায়েমপুর, চাঁদমারী, ইসলাম বাগ, শহীদ নগর, মাসদাইর, ইসদাইর, গাবতলী, এনায়েত নগর, তল্লা, সবুজবাগ, কুতুবপুর, পাগলা, দেলপাড়া, আলীগঞ্জ, দাপা, পিলকুনি, ভুইগড়, রঘুনাথ পুর, কুতুবপুর লামাপাড়া, তুষারধারা, শান্তিধারা, সিদ্ধিরগঞ্জের আইলপাড়া,পাঠান টুলি, নয়াআটি, হাজীগঞ্জ, গোপটা, গোদনাইল, ধনকুন্ডা, জালকুড়ির, পাইনাদী নতুন মহল্লা, সিআইখোলা, মিজমিজি পাগলা বাড়ি, মুজিববাগ, আল আমিন নগর, ডেমরার বাহির টেংরা, বক্সনগর, পশ্চিম সানারপাড়, সৈয়দপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার ঘরবাড়ি সহ রাস্তাঘাট। ঘরে পানি বাইরে পানি। দিন-রাত পানিতেই থাকতে হচ্ছে। সাথে রয়েছে শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, স্যুয়ারেজের ময়লা আবর্জনা ও নোংরা পানি।
মিজমিজি পাগলা বাড়ি এলাকার বিথী আক্তার নামের এক গৃহিনী জানান, এমনিতেই গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি, তার উপর আবার ডিএনডি খালের পচা ও নোংরা পানি এলাকার ভিতরে প্রবেশ করছে। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুম এলেই আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়ি। তাই তারা এ জলাবদ্ধা থেকে স্থায়ী ভাবে সমাধান করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সিদ্ধিরগঞ্জের একাধিক সভায় ঘোষণা দিয়েছেন জলাবদ্ধতা থেকে ডিএনডিবাসীর মুক্তি পেতে ডিএনডির সংস্কারের জন্য ৫শ' ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্বাবধায়নে শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে বলে ঐ সভাগুলোতে উল্লেখ করেছেন তিনি। ডিএনডিবাসীও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের দিকে তাকিয়ে আছেন। সরকার ঐ অর্থ ছাড় করলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে ডিএনডির-সেই প্রত্যাশা এখন এ এলাকার জনগণের।
এদিকে জলাবদ্ধতার বিষয়ে শিমরাইলস্থ পাম্প হাউজের উপ-সহকারী রাম প্রসাদ বাছার জানান, ৫০ বছরের পুরোনো ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতাসম্পন্ন ৪ টি মধ্যে ৩টি পাম্প চলছে। অন্যদিকে ছোট ৫ কিউসেক ২২ পাম্পের মধ্যে মাত্র ৫টি পাম্প সচল রয়েছে। ১২৮ কিউসেক ১টি ও ৫ কিউসেক ১৭টি পাম্প নষ্ট থাকায় চালাতে পারছি না। যদি আর বৃষ্টি না হয়, তাহলে ১০/১৫ দিনের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। তবে বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জলাবদ্ধতা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে হলে, এলাকাভিত্তিক পাম্প স্থাপন করে পানি নিষ্কাশন করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
বিডি প্রতিদিন/২৫ জুন ২০১৭/হিমেল