২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৬:০১

মালিতে নিহত সৈনিক মনোয়ারের বরিশালের বাড়িতে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

মালিতে নিহত সৈনিক মনোয়ারের বরিশালের বাড়িতে শোকের মাতম

মনোয়ারের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা।

আফ্রিকার দেশ মালিতে শান্তি রক্ষার কাজে গিয়ে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত সৈনিক মো. মনোয়ার হোসেনের (৩০) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে তার দুই নাবালক মেয়েসহ স্ত্রী এবং বৃদ্ধা মা। স্বজনদের কোন সান্ত্বনা তাদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। এখন দ্রুত মনোয়ারের লাশটি ফেরত পাওয়া এবং তার বিধবা স্ত্রী, দুই এতিম সন্তান এবং সন্তানহারা মায়ের দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহতের নিকট আত্মীয়রা। ওই বিস্ফোরণে বাংলাদেশী ৩ সৈনিক নিহত এবং এক মেজরসহ আরও ৪ জন আহত হয়। 

সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় মনোয়ার হোসেন। ২০০৩ সালে সেনা বাহিনীর সৈনিক পদে চাকুরি নেন তিনি।২০০৮ সালে একই এলাকার মো. কবির হাওলাদারের মেয়ে ইভা আক্তারকে বিয়ে করে মনোয়ার। তাদের দাম্পত্যে দুই মেয়ে নুসরাত জাহান ইলমুন (৭) এবং তাসমিন (দেড় বছর)। ছোট ভাই রবিউল ইসলাম সদ্য পুলিশ কনস্টেবলে চাকরি পেয়ে প্রশিক্ষণরত। একমাত্র বোন জোহরা বেগম গৃহিণী। 

চাকরি নেয়ার পর ১০ বছর আগে নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুতপুর এলাকায় এক খণ্ড জমি কিনে টিনের ঘর তৈরি করে সেখানে পরিবার-পরিজন রেখে যশোর ক্যান্টনমেন্টে সৈনিকের চাকরি করছিলেন মনোয়ার। বাবা না থাকায় বৃদ্ধা মাকেও নিজের বাসায় এনে রাখেন তিনি। এরই মধ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার সুযোগ হয়। গত ৩০ মে (২ রমজান) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যায় মনোয়ার। এর ৬দিন আগে পরিবারের সাথে সর্ব শেষ দেখা হয় তার। 

মালিতে ভালোই কাটছিলো সৈনিক মনোয়ারের দিন। প্রায় প্রতিদিনই স্ত্রী, সন্তান, মাসহ নিকটাত্মিয়দের কাছে ফোনে খোঁজ খবর নিতেন তিনি। এক বছরের জন্য শান্তিরক্ষা মিশনে মালি যাওয়া মনোয়ারের স্বপ্ন ছিলো সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার। সবশেষ গত শনিবার বাবার সাথে ফোনে কথা বলার সময় আঙ্গুর, আপেল আর আম নিয়ে আসার বায়না ধরেছিলো বড় মেয়ে ইলমুন। কিন্তু আপেল, আঙ্গুর আর আম নিয়ে বাবা আর আসবে না মেয়ের কাছে। স্ত্রীকে বলেছিলেন তিনি ভালো আছেন, সন্তানদের দেখেশুনে রাখতে। 

              নিহত মনোয়ারে স্ত্রী ইভা আক্তার।

কিন্তু গত রবিবার বিকেলে সেনা সদর দপ্তরের এক মুঠোফোন বার্তায় সব কিছু এলামেলো হয়ে যায় সৈনিক মনোয়ারের পরিবারের। তারা জানতে পারেন, রবিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে মালিতে টহল কার্যক্রম শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের শক্তিশালী হামলার শিকার হন শান্তিরক্ষীরা। তারা সফলতার সঙ্গে সন্ত্রাসীদের হামলা প্রতিরোধ করেন। কিন্তু এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশি সৈনিক নিহত এবং এক মেজরসহ ৪ জন আহত হন। 

মনোয়ার নিহত হওয়ার খবর নিকটাত্মীয়রা প্রথমে স্ত্রী এবং তার মায়ের কাছে চেপে গেলেও নানা পারিপার্শ্বিকতায় তারা বুঝে গেছেন তাদের মনোয়ার আর নেই। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মনোয়ার খুবই মিশুক এবং শান্ত প্রকৃতির লোক ছিলো। সে অল্পতেই মানুষের মন জয় করতে পারতো। তার মৃত্যুর খবরে বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন তারাও। তারা মনোয়ারের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।

মনোয়ারের শ্বশুর কবির হাওলাদার সরকারের কাছে তার (মনোয়ার) লাশটি দ্রুত দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

শান্তিরক্ষী মিশনে সৈনিক মনোয়ার নিহত হওয়ার খবরে তার বাড়ি ভিড় করছে পাড়া-প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজন। 

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, মালিতে নিহত সৈনিক মনোয়ারের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনাসহ এ সংক্রান্ত পরবর্তী কোন দিক নির্দেশনা সোমবার বিকেল পর্যন্ত সরকারি কোন সূত্র থেকে পাননি। সরকারের নির্দেশ পেলে তিনি সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

বিডি-প্রতিদিন/২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর