১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ২১:৫৪

'সিইসির বক্তব্য শিষ্টাচার বিরোধী, সংবিধান লংঘন, পক্ষপাত দুষ্টু'

নিজস্ব প্রতিবেদক

'সিইসির বক্তব্য শিষ্টাচার বিরোধী, সংবিধান লংঘন, পক্ষপাত দুষ্টু'

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির মুখপাত্রের মতো কথা বলেছেন। তিনি এমন বক্তব্য রেখেছেন যা অসাংবিধানিক এবং অসত্য।’ তিনি বলেছেন ‘সিইসির এই বক্তব্যের কারণে তার নিরপেক্ষতা প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছে।’ অবিলম্বে তিনি সিইসির বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, রবিবার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও সূচনা বক্তব্যে তিনি বিএনপিকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন। তিনি বলেন, বিএনপি সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করেছে, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত  মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। র‌্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সীমা ৩০ বছর করেছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিশ্চিত ভাবেই বিএনপিকে খুশি করতে এবং বিএনপির ‘আস্থা’ অর্জনের জন্য এমন অযাচিত, অপ্রাসঙ্গিক স্তুতি করেছেন। কিন্তু এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি শুধু মিথ্যাচার করেননি, ইতিহাস বিকৃতি এবং সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কোনো দলকে তৈলমর্দন জরুরি নয়। সিইসি যেসব বক্তব্য রেখেছেন সেগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে মোটেও সম্পর্কিত নয়। বাংলাদেশের সংস্কৃতি হলো, নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য হয় আওয়ামী লীগকে গালি দিতে হবে অথবা বিএনপিকে প্রশংসা করতে হবে। এক শ্রেণির সুশীল ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর জাতির ওপর এই ভারসাম্য তত্ত্বের ভূত চাপিয়েছিল।
সেই অবস্থা থেকে আস্তে আস্তে বাংলাদেশ একটি সহনীয় অবস্থার দিকে এসেছে। রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বমানবতার নেত্রী তার অনন্য নেতৃত্বের কারণে আজ জাতির পিতা তার সম্মানের আসনে বসেছেন। জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বাংলাদেশে যারাই যে রাজনীতি করুক না কেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করবে, জাতির পিতায় বিশ্বাস করবে- এরকম একটি রাজনৈতিক আবহ বিনির্মাণের কাজ বহুদূর এগিয়েছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। কিন্তু এখনো বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ভর করে। বিশেষ করে, কিছু চেয়ারে এখনো পাকিস্তানি ভুতের আছড় রয়ে গেছে। ওই সব ‘মহান ব্যক্তিরা’ চেয়ারে বসে অনেক জ্ঞান বিবর্জিত কথা বলেন। চেয়ারলোভীরা নিজেকে ঈশ্বরের পরেই ক্ষমতাবান মনে করেন। আর তার ক্ষমতা জাহির করার জন্য তিনি নিরপেক্ষতায় মুখোশ আঁটেন মুখে। তখন তিনি নন, কথা বলে ‘ভূত’। নায়ক হবার জন্য ইতিহাস বিকৃতি এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে নিজেই খলনায়কে পরিনত হন। আমাদের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে একরকম ভূতে পেয়েছিল। এজন্য তিনি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে বলেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কারও একক নেতৃত্বে হয়নি। এবার ভূতে পেয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে।
এজন্য তিনি জিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন। জিয়া যদি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠাতা হন তাহলে জাতির পিতা কি গণতন্ত্রের হত্যাকারী? মি. হুদার মতে গণতন্ত্রের ঘাতক কে ছিলেন? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে কি তাহলে হ্যাঁ না ভোটের প্রহসন? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঘাতক, লুটেরা, গণহত্যাকারীদের রাজনীতির অধিকার? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে ক্যান্টনমেন্টে রাজনৈতিক দলের জন্মগ্রহণ? বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে সামরিক পোশাক পরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল? তাহলে নুরুল হুদা কি নিরপেক্ষ নির্বাচন করবেন না বলাই বাহুল্য।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিনীতভাবে জানাতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করার ফলে জিয়া একজন অবৈধ ক্ষমতা দখল করা স্বৈরশাসক ছাড়া আর কিছুই নন।
এছাড়াও সিইসি হুদা অসত্য তথ্য দিয়েছেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তা জাতির পিতার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বঙ্গবন্ধুর নিদের্শে গঠিত ড: কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনেই প্রস্তাবিত। দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা শুরু করেছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
সিইসির মুখে এরকম মিথ্যার ফুলঝুরি জাতিকে হতবাক করেছে
 প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাকে খুশি করতে ইতিহাস বিকৃতি এবং মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন, আমরা জানি না। কিন্ত এটা বুঝি তাঁর একটা মতলব আছে। আর তাঁর মতলবের সঙ্গে বিচারপতি সিনহার মতলবের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছি, চারিদিকে নানা চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলছে। আর এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, সরকারের ভেতর থেকে। ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে কোনো পদে বসাতেই তিনি পাল্টে যাচ্ছেন । নিরপেক্ষতার ভড়ং ধরছেন। ভূত তাড়ানোর জন্য যে শষ্য তাতেই ভূত বাসা বাঁধছে।
আমি অবিলম্বে তাকে তার অসত্য বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ তার বিরুদ্ধে দূর্বার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর