১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ১৮:৫৩

'নির্বাচনে বর্ধিত গৃহকরের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, জনগণ এত বোকা না'

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:

'নির্বাচনে বর্ধিত গৃহকরের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, জনগণ এত বোকা না'

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, বর্ধিত গৃহকরের কোনো নেতিবাচক প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না। এগুলো দিয়ে আওয়ামী লীগের ভোট হয় না। জনগণ এত বোকা না। খোলাবাজারে ১৫ টাকা চাল ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল কি বাড়ছে না? সরকার ও মন্ত্রণালয় কি কম বুঝে? মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই গৃহকর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমিও আওয়ামী লীগ করি। দলের প্রতি আমারও দায়বদ্ধতা আছে। আজ বুধবার নগর ভবনের কেবি আবদুচ ছাত্তার মিলনায়তনে ‘সিটি কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্রে ইমারত ও জমির পঞ্চবার্ষিক মূল্য নির্ধারণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে ‘বর্ধিত কর আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে কিনা’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে সর্বোচ্চ ১০ গুণ পর্যন্ত গৃহকর বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছে নগরবাসী। এ নিয়ে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং এম মনজুর আলম কর সহনশীল পর্যায়ে রাখতে চিঠি দিয়েছেন। বিবৃতি দিয়েছেন সাবেক ২৩ কাউন্সিলর। তাছাড়া বাড়ী ভাড়া নয়, আয়তন ও অবস্থানের ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের দাবিতে কয়েকটি নাগরিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কর্মসূচির প্রেক্ষিতে মেয়র গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চসিকের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এ সময় চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান কর নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা।

মেয়র বলেন, গৃহকর নিয়ে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মনজুর আলমের চিঠির জবাব লিখিত জবাব দেব। তাছাড়া এক্স কাউন্সিলর ফোরামের চিঠির জবাবও দেব। একেক জনের চিঠির বিষয় একেক রকম। তিন-চার দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়া হবে।

আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক পুনর্মূল্যায়নে সর্বমোট এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে প্রস্তাবিত গৃহকর দাবি ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন ২৮ হাজার ৭০২ হোল্ডিংয়ের বিপরীতে গৃহকর দাবি ৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নতুন হোল্ডিং বাদে দাবির পরিমাণ হয় ৮০৪ কোটি টাকা। আগের মূল্যায়নে দাবি ছিল ২০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তাহলে কর দাবির পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে। সেটাও প্রাথমিক, চূড়ান্ত নয়। আপিলে চূড়ান্ত হবে।
নগর পিতা বলেন, নিয়ম মতে, আমি ২৭ শতাংশ পর্যন্ত টেক্স ধার্য্য করতে পারি। কিন্তু তা না করে আমরা চসিক ১৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স, রেইট ধার্য করেছে নগরবাসীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে। আমি আইন তৈরি করিনি যে আমি সংশোধন করতে পারব?
সিটি মেয়র বলেন, গৃহকর নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ থাকলে তার জন্য আপিল বোর্ড আছে। সেখানে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করলে কর অনেক কমে আসবে। রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গৃহকর নিয়ে আপিলের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমার বিশ্বাস, রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্তে সকলেই খুশি হবেন। ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণের বিকল্প কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশন কর তফসিল ২০১৬ অনুসারে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ কর নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু নগরবাসীর স্বার্থে ১৭ শতাংশ কর আদায় করা হচ্ছে। কর তফসিল ২০১৬ অনুসারে ইমারত ও জমির কর ৭ শতাংশ, আবর্জনা নিস্কাশন ৭ শতাংশ, সড়ক বাতি ৫ শতাংশ ও স্বাস্থ্যকর ৮ শতাংশ মিলিয়ে মোট ২৭ শতাংশ কর নেওয়ার বিধান আছে। ২৭ শতাংশের স্থানে নগরবাসীর সুবিধার্থে ১৭ শতাংশ নিচ্ছি। তাই আইন নিয়ে কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করলে বা সংশোধনের প্রত্যাশা করলে সে সুযোগ কি আমার আছে?
প্রতিনিয়তই চসিকের ব্যয় বাড়ছে উল্লেখ করে চসিক মেয়র বলেন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন বাবদ ব্যয় হয় ৭১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ১৯১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, সড়ক বাতি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয় ১৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চসিক পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে ৪৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেসরকারি করদাতাদের অবদান এবং সরকারি বরাদ্দ মাত্র ৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর