১৭ নভেম্বর, ২০১৭ ২১:২৫

সাভারে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে গেছেন স্বজনরা

নাজমুল হুদা, সাভার:

সাভারে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে গেছেন স্বজনরা

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের

অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে সাভারে রাস্তায় ফেলে গেছেন স্বজনরা। স্থানীয় কয়েক যুবক তাকে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্রের (সিআরপি)তে ভর্তি করেন। কিন্তু সিআরপির ডাক্তারগণ বলছেন তিনি স্ট্রোক করেছেন। তার এ রোগের জন্য সিআরপি নয় ঢাকায় চিকিৎসা দরকার। কিন্তু এ কে তার দায়িত্ব? কে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাবেন?
এলাকার মেধাবী ছাত্র আবুল খায়ের দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সম্মুখ গেরিলা যুদ্ধে। যুদ্ধকালে সিলেট ও চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানা এলাকায় ছিলেন যোদ্ধাদের কমান্ডার। ২ নম্বর সেক্টরে অধিনায়ক খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে বীর দর্পে শত্রুর মোকাবিলা করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তার সুনাম ছিল গেরিলা হিসেবে।
চিরকুমার এ মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের আজ বয়সের ভারে ন্যুজ। নানা রোগে আক্রান্ত। ৩ /৪ বছর পূর্বে দু’দফায় স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির কারণে সাভারের সিআরপিতে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন নিজ বাড়িতে। সহায় সম্পদ রোগের কারণে সব শেষ হয়ে গেছে। তবে নিয়মিত পাচ্ছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারের দেয়া ভাতা। সম্প্রতি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। অবচেতন হওয়ায় বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করেন। ফিস ফিস করে কিছু বললেও সহজেই বুজার উপয় নেই। কিন্তু আত্মীয় স্বজনদের সাথে তার বৈরী সম্পর্কের কারণে কেউ তার সহায়তায় এগিয়ে আসছেন না। স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সম্মুখ গেরিলা যুদ্ধে, সেই বীর আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত।
সোমবার রাতে চিরকুমার এ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে সাভারের সিআরপি সড়কে কে বা কারা ফেলে চলে যায়। স্থানীয় যুবক মমতাজুল হক জনি সিআরপির পূর্বেকার রোগী হিসেবে দীর্ঘদিন পর তাকে দেখে চিনতে পারেন। রাতেই প্রতিবেশী বন্ধু বান্ধবদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে সিআরপিতে নিয়ে যান। সিআরপি কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে একটি কক্ষে তার থাকার ব্যবস্থা করেন।
সিআরপির সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন জানান, রাতে স্থানীয় পরিচিত কয়েক যুবক আবুল খায়েরকে নিয়ে আসলে আমরা তাৎক্ষণিক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছি।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরের সহযোদ্ধা শাহরাস্তির তামতা গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল্লাহ পাটওয়ারি বাংলাদে প্রতিদিনকে বলেন, আবুল খায়ের যৌবনে বিয়ে সাদি করেননি। রোগাক্রান্ত হয়ে সহায় সম্বল সব খুইয়েছে। তিনি বলেন আমি নিজেও তাকে সিআরপিতে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় তার আত্মীয় স্বজনরা তার খোঁজ নেন না।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর