১৮ নভেম্বর, ২০১৭ ২২:১৪

নাগরিক সমাবেশে যুবলীগের নান্দনিক শোডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নাগরিক সমাবেশে যুবলীগের নান্দনিক শোডাউন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্থান পাওয়ায় আজ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দ উদ্যানে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে নির্বাচনী শোডাউন করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বেলা পৌণে তিনটায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের মূল অনুষ্ঠান। 

সভার শুরুতে শহীদদের প্রতি এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর ‘ধন্য মুজিব ধন্য’, ‘শোন একটি মুজিবের চেয়ে লক্ষ্য মুজিবুরের কন্ঠ’, যত দিন রবে পদ্মা যমুনা গঙ্গা মেঘনা বহমান ততদিন রবে কীতি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’ গানগুলো সমবেত কন্ঠে পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন এই নাগরিক সমাজের সমাবেশে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকেও চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এতে বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও নজরুল গবেষক এমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশে ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুল। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেওয়া ধন্যবাদ স্মারক পাঠ করেন এবং সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  

সমাবেশকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ। সংগঠনের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের উদ্যোগে সমাবেশকে দৃষ্টি নন্দন করতে ৩০ হাজার সবুজ গেঞ্জি, সবুজ ক্যাপ ও ক্যাপ (টুপি) বিতরণ করা হয় যুবলীগের দক্ষিণের নেতাকর্মীদের মাঝে। সেই সবুজ গেঞ্জি, সবুজ ক্যাপ ও ক্যাপ পরে সমাবেশে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে ছিল যুবলীগের পতাকা। শেখ হাসিনা যখন মঞ্চে আসার পর ও বক্তব্যের সময় তারা পতাকা নেড়ে অভিবাদন জানান। বিশিষ্টজনেরা যখন বক্তৃতা করছিলেন তখন তারা পতাকা নেড়ে স্বাগত জানান। সকাল থেকেই দক্ষিণের প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা ও প্রতিটি ইউনিট থেকে নেতাকর্মীরা গায়ে সবুজ গেঞ্জি পড়ে সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বেলা ১টার মধ্যে তারা সভামঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। 

সংগঠনের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট নিজে উপস্থিত থেকে নেতাকর্মীদের পতাকা নেড়ে উৎসাহ দেন। এ প্রসঙ্গে সম্রাট বলেন, জাতির পিতার ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ায় আমরা জাতিগতভাবে গর্বিত হয়েছি। ইউনেস্কোও সন্মানিত হয়েছে। কারণ এই মহান নেতার ঐতিহাসিক ভাষনটিকে তারা সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্দেশে আমরা সর্বাধিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আগে থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিট নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। আমাদের ডাকে সারা দিয়ে যেসব নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কারণেই আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেরা সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এদিকে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত করে পুরো সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের এলাকা। বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি এসব শ্লোগান ধরেন নাগরিক সমাবেশে আগতরা। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘কে বলে রে মুজিব নাই, মুজিব সারা বাংলায়’ ইত্যাদি শ্লোগানের পাশাপাশি নির্বাচনী ছাপও ফুটে ওঠে। শ্লোগানের তালে তালে বিভিন্ন ব্যানার, ফেষ্টুন, প্লাকার্ড নিয়ে প্রবেশ করে উদ্যানে। সমাবেশস্থলে জড়ো হওয়া মানুষের হাতে লাল-সবুজের পতাকা ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতীকও তুলে ধরতে দেখা যায়। কেউ বা আবার নিজেদের পছন্দের নেতাদের ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুনও তুলে ধরছেন হাতে। 

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ ভাষণ নিয়ে নিজের লেখা সাড়া জাগানিয়া কবিতা ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ আবৃত্তি করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। প্রয়াত সব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি। প্রায় ৯০ ফুট বিশাল নৌকা সদৃশ্য মঞ্চে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশে স্বনামধন্য শিল্পী শাহীন সামাদ, মমতাজ বেগম এমপি, সাজেদ আকবর ও চন্দনা মজুমদার। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন  দেশের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলিম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী।

নাগরিক সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর রঙবেরঙের ডিসপ্লে ছাড়াও ব্যানার, ফেস্টুন এবং নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে শত শত পোস্টার লাগানো হয়। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সংলগ্ন এলাকাকেও মনোরম সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক বিশাল নৌকা সবার দৃষ্টি কাড়ে। সমাবেশের মূল মঞ্চও বানানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সামনে স্থাপন করা হয় আলাদা একটি মঞ্চ। সমাবেশ কার্যক্রম সরাসরি প্রচারে সমাবেশস্থলে লাগানো হয়েছিল কয়েকটি বড় বড় এলইডি মনিটর। 

নাগরিক সমাবেশে স্মরণকালের স্মরণীয় জনসমাগমের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এই লক্ষে সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ, এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে। সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সুসজ্জিত পোশাকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হতে। প্রতিটি প্রবেশ পথেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে এ বিশাল উদ্যান। একই সঙ্গে শিল্প-সাংস্কৃতি ও পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের মানুষজনও হাজির হন স্বাধীনতার ঘোষণার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এই উদযাপনে। বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হয়। এছাড়াও অনেক নেতাকর্মীদের মূল উদ্যানের ভিতরে প্রবেশ না করে আশপাশের রাস্তাগুলোতে মিছিল নিয়ে রাস্তায় শোডাউন দিতেও দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দী ছাপিয়ে শাহবাগ, টিএসসি চত্বর, দোয়েল চত্বরেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। টিএসসি এলাকার জনস্রোত দেখে মনে হয়েছে এটি যেন আলাদা কোনো সমাবেশ। সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা না থাকায় অনেকে রাজু ভাস্কর্যের নিচে অবস্থান নেয়। অনেকেই আবার মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করেন।

বিডি প্রতিদিন/মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর