১৯ নভেম্বর, ২০১৭ ১৪:৩৯

রোগীর স্বজন-চিকিৎসকের ধাক্কাধাক্কি, আঘাত পেয়ে প্রসূতি আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

রোগীর স্বজন-চিকিৎসকের ধাক্কাধাক্কি, আঘাত পেয়ে প্রসূতি আহত

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির সময় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমেনা বেগম নামে এক প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এই ঘটনার পর অসুস্থ আমেনা বেগমকে জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অস্ত্রপচার করেন চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করেন রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকরা। অপরদিকে পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা আমতলা এলাকার বাসিন্দা শাহিন ঢালীর স্ত্রী আমেনা বেগম (২২) গত ৮ নভেম্বর বান্দ রোডের বেসরকারী সিটি জেনারেল হাসপাতালে বিনা অপারেশনে এক কন্যা শিশুর জন্ম দেন। পরে রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হলে স্বজনরা গত ১৭ নভম্বর আমেনাকে শের-ই বাংলা মেডিকেলের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করেন। গত ২দিনে রোগীর শরীরে ৫ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। রোগীর শরীরে আরো রক্ত দরকার বলে জানায় চিকিৎসকরা।

আমেনার স্বামী শাহিন ঢালী জানান, শনিবার রাতে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তার স্ত্রীর শরীরে দেওয়ার জন্য এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। রক্ত সংগ্রহ করার পর ওই চিকিৎসকের আর কোন খোঁজ মিলেনি। ওই রাতে রোগীর পেটে ব্যাথা আরো বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনা বারবার চিকিৎসক ডাকতে গেলে বিরক্ত হন চিকিৎসকরা। রবিবার সকালে রাকিব নামে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ‘রক্ত ম্যানেজ করতে না পাড়ায় রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না’ বলে নোট লিখেন।

রক্ত সংগ্রহ করার পরও রোগীর ব্যবস্থাপত্রে রক্ত সংগ্রহ করতে না পাড়ার কথা লেখায় রোগীর স্বামী শাহিন ও ইন্টার্ন চিকিৎসক রাকিবের মধ্যে উত্তেজিত বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায় রোগীর স্বামী চিকিৎসক রাকিবের শার্টের কলার ধরেন। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অন্যান্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ওই রোগীর সামনেই শাহিন ঢালীকে বেদম মারধর করে। এ সময় কোন এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের লাথিতে প্রসূতি নারী আমেনার পেটে আঘাত লাগে বলে দাবী তার স্বামী শাহিন ঢালীর। এরপর থেকে ওই নারীর রক্তক্ষরণ শুরু হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে কোতয়ালী থানা পুলিশ এবং গাইনী বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

শের-ই বাংলা মেডিকেলের গাইনী বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিখা সাহা বলেন, রোগীর স্বজনদের রক্ত সংগ্রহ করার কথা জানালে তারা ডাক্তারকেই রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হন। এ সময় কোনভাবে ওই প্রসূতি নারী আঘাত পেতে পারেন। তার পেটে কেউ লাঠি দেয়নি। ওই ঘটনার পর তিনি নিজ দায়িত্বে ওই নারীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অস্ত্রপচার করেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসায় সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা করেন ডা. শিখা সাহা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতয়ালী) মো. আসাদুজ্জামান জানান, রোগীর পেটে লাথি মারার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দুই পক্ষ পরস্পর বিরোধী অভিযোগ করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগে রোগীর চিকিৎসা, তারপর এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।

শের-ই বাংলা মেডিকেলে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের মধ্যে প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া সহ ধর্মঘটের মতো ঘটনাও ঘটছে।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর