২৪ নভেম্বর, ২০১৭ ১৮:০৯

গভীর শ্রদ্ধায় তাজরীনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণ

সাভার প্রতিনিধি:

গভীর শ্রদ্ধায় তাজরীনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণ

সাভারের নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরীন ফ্যাশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সহকর্মী, স্বজন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এসময় তারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দোষীদের বিচার কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। শুক্রবার সকাল থেকেই নিশ্চিন্তপুর এলাকার তাজরিন ফ্যাশনের সামনে পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা জানান শ্রমিকরা।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে ১২৬ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এসময় আহত হন অন্তত ৫ শতাধিক শ্রমিক। অগ্নিকাণ্ডের সময় নয় তলা ভবনটির প্রতিটি ফটক তালাবদ্ধ থাকায় জীবন বাঁচাতে লাফিয়ে পড়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন। সেদিনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো দুঃস্বপ্ন আর পঙ্গুত্বের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন শত শত শ্রমিক। আগুনের সেই বিভীষিকার কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে ওঠে আহত শ্রমিকরা। 

মৃত্যুকূপ থেকে ফেরা আহত শ্রমিক, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনেরা তাজরীন ট্রাজেডির পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নিশ্চিন্তপুর পুড়ে যাওয়া ভবনের সামনে জড়ো হন। এসময় অশ্রুসিক্ত নয়নে হতাহতদের স্মরণে পুড়ে যাওয়া ভবনটির প্রধান ফটকের সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। 

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপস্থিত স্বজনরা তাজরিন ফ্যাশনে হতাহত শ্রমিকদের আবাসন ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়াসহ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আহতদের সুচিকিৎসা এবং তাজরিনের মালিক দেলোয়ার হোসেনের শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। 

বাংলাদেশ গামেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, শ্রমিক হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, নিহত ও আহত শ্রমিকদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে। স্বাধীন বাংলা গামেন্টর্স শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান বলেন, নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, দোষীদের বিচার ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা দিতে হবে । 

এ্যাডভোটেক আব্দুল আওয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শতকোটি টাকা ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যার্থ হয়ে তাজরীন ফ্যাসনের মালিক দেলোয়ার হোসেন পরিকল্পিতভাবে কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই আগুনে পুরে শতাধিক শ্রমিকদের দেহ অঙ্গার হওয়ায় হতভাগ্যদের পরিবারে নেমে আসে কষ্ট ও অশান্তি। মাটিচাপা পড়ে যায়ে তাদের ভবিষ্যত স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। 

বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার লিমা তাজরীনে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পাচঁ বছর পূর্ণ উপলক্ষে ভবন মালিক দেলোয়ারসহ দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, আগুন থেকে রক্ষা পেতে লাফিয়ে প্রাণে বাঁচলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছে অনেক শ্রমিক। অর্থাভাবে নিয়মিত খাবার জোগাড়ই যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে শরীরে বাসা বাঁধা রোগের চিকিৎসা কিভাবে করাবেন আহতরা। এছাড়া সন্তানের শিক্ষা, নিজের কাজ না থাকার হতাশা সব মিলিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন তারা।

এব্যাপারে আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা শামীনুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তাজরীন ট্রাজেডির ঘটনায় পৃথক কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে। 


বিডি প্রতিদিন/২৪ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর