১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২০:৩৬

সম্মাননা পেলেন ভিনদেশি লুসি হল্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:

সম্মাননা পেলেন ভিনদেশি লুসি হল্ট

বৃটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট। যিনি ভিনদেশি হয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়েছেন। ১৯৭১ সালে চিঠি লিখে বাংলাদেশের যুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র বিদেশে জানানোর কাজ করেছেন তিনি। তার এ কাজের স্বীকৃতি কাগজে কলমে কোথাও লিপিবদ্ধ না হলেও এবারের মহান বিজয় দিবসে তাকে সম্মাননা জানিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।

গত শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর চাঁদমারী পুলিশ অফিসার্স মেসে খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে লুসি হল্টের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে প্রথম গার্ড অব অনার প্রদানের নেতৃত্বদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম।

অনুষ্ঠানে লুসি হল্টকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি আরও ৩৯ জন খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত ও পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে লুসি হল্ট বলেন, কোন দিন তিনি বাংলাদেশে সন্মাননা পাবেন তা ভাবেননি। ভালোবেসেই বাংলাদেশে থাকছেন বলেন তিনি। 

ইংল্যান্ডের নাগরিক লুসি হল্ট উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে কাজ করতে এ দেশে আসেন। স্বল্পদিনের জন্য এ দেশে থাকার কথা থাকলেও তিনি বাংলাদেশকে ভালোবেসে ফেলেন। তাই সেই থেকে মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে অদ্যবধি তিনি রয়ে গেছেন এদেশে। ৮৮ বছর বয়সের লুসি হল্টের জীবনের শেষ ইচ্ছা বাংলার মাটিতেই তাকে যেন সমাহিত করা হয়। 

তিনি ১৯৭১ সালে যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে বেসমারিক যুদ্ধাহত মানুষের চিকিৎসা সেবায় অংশ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিরবে কাজ করেছেন মানবকল্যাণে।  ১৯৭১ সালে এ দেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিদেশীদের সমর্থন চেয়েছিলেন লুসি। ১৯৭১ সালের ২ মে লুসি তার মায়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিটি মায়ের মৃত্যুর পরে লুসির বোন ফেরত দিলে সেটি আজও সংরক্ষণে রয়েছে তার। 

সেই চিঠিতে লুসি হল্ট উল্লেখ করেছিলেন, বাঙালীরা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ চায় না। পাকিস্তানী নয়, বাঙালী হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। যোগ্য নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছে বাঙালীরা। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে একমত প্রকাশ করে লুসি আরও লিখেছিলেন, পাকবাহিনীর হাতে নিরস্ত্র বাঙালীদের নির্মম নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। ওই চিঠি পেয়ে সে সময় লুসির পরিবার তাকে ইংল্যান্ডে ফিরতে বললেও লুসি এদেশের মায়া ছেড়ে যান নি। বরং অন্যদেশে থাকা বন্ধুদের চিঠিতে জানান, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার যৌক্তিকতা। লুসি তার বিদেশী বন্ধুদের জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ছিলেন তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা। কিন্তু সেই অর্থে সবার সামনে বেগম ফজিলাতুন্নেসার ‘ত্যাগের’ কথা তুলে ধরা হয়নি। যুদ্ধ শেষে তাই লুসি হল্ট ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। জবাবে ১৯৭৩ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানার স্বাক্ষর করা একটি চিঠি পেয়েছিলেন লুসি। সেই চিঠিতে লুসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন শেখ রেহানা।

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট দুই কন্যা বাদে বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারকে হত্যা করার পর আর তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা হয়নি লুসির। কিন্তু স্মৃতি হিসেবে লুসি আজও ধরে রেখেছেন শেখ রেহানার সেই চিঠি। চলনে বলনে বাঙালী নারীর মতো লুসি হল্টের প্রত্যাশা বাংলাদেশ সরকার তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেবে। ভিসা নবায়নের জন্য বছরে তার (লুসি হল্ট) ৩৮ হাজার টাকা গুনতে হয়। ওই টাকাটাও মওকুফ করাতে চান লুসি। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

বিডিপ্রতিদিন/ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর