১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ২০:২০

বরিশালে আরো ৩ দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ

রাহাত খান, বরিশাল:

বরিশালে আরো ৩ দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ

বরিশালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ৩৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২ হাজার ৯শ’ ৬৯ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে সুন্দরবনের জলদস্যু ‘বড়ভাই, ভাইভাই ও সুমন বাহিনীর’ প্রধানসহ ৩৮ জন সদস্য। অন্ধকার জীবন ছেড়ে আলোর পথে আসার জন্য মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে র‌্যাব-৮ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে তারা আত্মসমর্পণ করেন। 

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের অন্যতম ভয়ঙ্কর জলদস্যু বাহিনী ‘বড় ভাই বাহিনী’র প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লা তার অতীত কৃতকর্মের জন্য সরকার তথা জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাকেসহ অন্যান্যদের ভাল হওয়ার সুযোগ দেয়ায় স্বরাস্ট্রমন্ত্রী সহ র‌্যাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ওয়াহিদ মোল্লা বলেন, তার মতো বড় দস্যুগ্রুপ সরকারের দেওয়া ভালো হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছেন। এখনও যে সব ছোট ছোট দস্যুগ্রুপ সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদেরও তার পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানান, স্ব-ঘোষিত কুখ্যাত জলদস্যু বাহিনী প্রধান ওয়াহিদ মোল্লা। 

র‌্যাব-৮ পরিচালক উইং কমান্ডার হাসান ইমন আল রাজিবের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সুন্দরবন বিশ্ব ঐহিত্য। এখানে দেশী-বিদেশী বহু পর্যটক আসে। এছাড়া লাখ লাখ মৎস্যজীবী, বনজীবী ও বাওয়ালী সুন্দরবনে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের নিরাপদ করার জন্য সুন্দরবনে র‌্যাবের আরো ৪টি ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো দস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর বলেন, যারা ইতিমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন, কেউ যদি ফের তাদের দস্যুতায় যেতে বাধ্য করে কিংবা প্ররোচনা দেয়, তাহলে সেইসব গডফাদারদেরও কঠোর আইনের আওতায় আনবে র‌্যাব।

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি বরিশাল সদর আসনের এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ সুন্দরবনে র‌্যাবের দস্যু বিরোধী অভিযানের ভূয়সী প্রসংসা করে এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান। ইতিপূর্বে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের পুনর্বাসনসহ তাদের যথাযথ তদারকি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জেবুন্নেছা আফরোজ। 

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাস্ট্র মন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসা দস্যুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও নারী নির্যাতনের মতো মামলা আছে, তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আর অন্যান্যদের বিষয়টি সরকার সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবে। 

তিনি বলেন, এখনও যারা সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত আছেন, তারা বাঁচতে চাইলে অবিলম্বে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। তিনি বলেন, কেউ দস্যুতা করবে, আর সরকার বসে থাকবে সেই দিনটি আর নেই। বাংলাদেশে কোন দস্যুতা, কোন সন্ত্রাসবাদ কোন জঙ্গিবাদ চলবে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শেকর উপরে ফেলবে। 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, রেঞ্জ জিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন, র‌্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মো. মাহমুদ হাসান খান, র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম, র‌্যাবের অপারেশন শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মাহবুব হাসান, র‌্যাবের পরিচালক উইং কমান্ডার আব্দুল আহাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আত্মসমর্পণ করা ‘বড়ভাই বাহিনীর’ ১৮ জনে ১৮টি অস্ত্র ও ১৪ শ’ ২২ রাউন্ড গোলাবারুদ, ‘ভাইভাই বাহিনীর’ ৮ জনে ৮টি অস্ত্র ও ৩শ’ ৩১ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং ‘সুমন বাহিনীর’ ১২ জনে ১২টি অস্ত্র ও ১২শ’ ১৫ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়েছে। ২০১৬ সালের মে মাস থেকে এ নিয়ে মোট ১৭টি জলদস্যু বাহিনীর ১৯০ জন সদস্য ৩২০ টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৬ হাজার ৮৯০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। 


বিডি প্রতিদিন/১৬ জানুয়ারি ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর