১৭ জুলাই, ২০১৮ ১১:৩৭

রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে ককটেল হামলা, আহত ৫

আ’লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে ককটেল হামলা, আহত ৫

প্রতীকী ছবি

রাজশাহীতে বিএনপির প্রচার সমাবেশে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া বটতলা এলাকায় বিএনপির এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এতে একজন সাংবাদিকসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে।
এ ঘটনায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু অভিযোগ করেন, ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি দেখাতে আওয়ামী লীগ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে বাইরে আসতে পারে, সেজন্য বিএনপি যখন প্রচারণা চালাচ্ছে তখন আওয়ামী লীগ এই ককটেল হামলা চালিয়েছে।
আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অভিযোগ করেন, এতোদিন রাজশাহীর পরিবেশ শান্ত ছিল। বিএনপি নেতা দুলু রাজশাহীতে আসার পর এই ঘটনাটি ঘটলো। তারা পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিব্ধ করতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, এই ঘটনার পেছনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হাত আছে। তারা নির্বাচন থেকে সরে যেতে চক্রান্ত করছে।  
প্রত্যাক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা গণসংযোগের আগে সমাবেশ করছিলেন। ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত। নেতাদের বক্তব্য শেষ হতেই তিনটি মোটরসাইকেলে মুখোশধারীরা সেখানে গিয়ে পর পর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
পরে তারা দ্রুত টিকাপাড়ার রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে বাংলাভিশন টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আদিত্যকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে তিনি আশঙ্কা মুক্ত। ঘটনার পর ওই এলাকায় বিএনপির গণসংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করেন।
খবর পেয়ে র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার আমীর জাফর জানান, ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া র‌্যাবও ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বর্তমানে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সকালে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ দলীয় নেতাকর্মীরা সাগরপাড়া বটতলা এলাকায় বুলবুলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে এসে মুখোশধারীরা সেখানে পর পর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে তাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান ও কর্মী স্বপন কুমার আহত হয়েছেন। তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মিজানুর রহমান মিনু অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহীতে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে এই ককটেল হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের মোটরসাইকেল বাহিনী এতদিন পোস্টার- ব্যানার  ছিঁড়ে ফেলছিল, ফেস্টুন ভেঙে ফেলছিল। তারাই এবার বুলবুলের নির্বাচনী প্রচারণায় ককটেল হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র নেতা মিনু।
তবে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খারুজ্জামান লিটন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা রাজশাহীকে অসহিষ্ণু করার চেষ্টা করছে বিএনপি। মাঠে জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে রাতের আধারে বিএনপির নেতাকর্মীরা তার পোস্টার-ব্যানার ছিড়ে ফেলছে। সংখ্যালঘুদের হুমকি দিচ্ছে এবং ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই এই ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজিয়েছে। ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তারা যতই চেষ্টা করুক শান্তির নগরী রাজশাহীকে কখনও অশান্ত করতে দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর