১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৩:১৩

নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদল সভাপতি রনিকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদল সভাপতি রনিকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে আটক করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পরিবার সূত্র অভিযোগ করেছে। সন্ধ্যার পর থেকেই রনির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রবিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান পরিবারের সদস্যরা। তবে অসমর্থিত সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন রনিকে ঢাকায় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে রনির সন্ধান দাবি করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। রনির বড় ভাই রুবেল জানায়, আমি নিজেও কয়েক স্থানে যোগাযোগ করেছি, আমার ভাইয়ের কোন সন্ধান পাচ্ছি না। তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তার ছোট ভাই রানা জানায়, রনিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফতুল্লা থানায় আমরা যোগাযোগ করেছি তারা এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানাতে পারেনি। ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, তাদের থানায় রনি নামে কেউ আটক নাই।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ প্রমুখ।

তৈমূর আলম খন্দকার বিবৃতিতে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করে গুম রাখা ও যথাসময়ে আদালতে উপস্থিত না করাটা সরকারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যা অসাংবিধানিক ও মানবতাবিরোধী কাজ।

পৃথক বিবৃতিতে মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ সকল যুগ্ম আহবায়কেরা অবিলম্বে মশিউর রহমান রনির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসানের বিবৃতিতে বলা হয়, রনিকে পরিকল্পিতভাবে গুম করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগকে আমলে নিয়ে ছাত্রদল নেতৃদ্বয়ের দাবি অবিলম্বে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করা হউক। পরে যদি সাজানো কোন নাটকের মাধ্যমে তার সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু করা হয় তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, রনির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টিরও বেশি মামলা রয়েছে। তবে তিনি কোন মামলাতে জামিন নেননি। দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশের সামনেই মিছিল মিটিং করে আসলেও রনিকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। মূলত সে ফতুল্লা থানরা বিএনপির সভাপতি শাহআলমের অনুগামী হওয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।

রনিকে ফিরিয়ে দিতে পরিবারের আকুতি

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে ফিরে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছে তার স্বজনেরা। তারা বলেন, অপরাধী হলে আদালতে সোপর্দ করুন, না হয় আমাদের সন্তান আমাদেরকে ফিরিয়ে দিন।

রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এ আহবান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, নিখোঁজ রনির খালা রাশেদা আক্তার কান্না, রনির খালা জাহানারা বেগম, মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মামাতো বোন ডলি আক্তার, বড় ভাই শেখ মো. আবু সাঈদ রুবেল, ছোট ভাই মহিবুর রহমান রানা, ভাবী সানজিদা ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে রনির ছোট ভাই মহিবুর রহমান রানা জানান, তার ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রনি (৩০) গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় পারিবারিক কাজে ঢাকা যায়। আর রাত পর্যন্ত ফিরে আসেনি। তবে রাত সাড়ে ১০টায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ঢাকা থেকে টেলিফোনে জানায়, এই মাত্র একটি কালো মাইক্রোবাসে করে কয়েকজন সাদা পোশাকধারী নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মশিউর রহমান রনিকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে নিখোঁজ রনি।

তিনি জানান, বাবা, মা ও বোন হজ পালনের জন্য সৌদি আরব রয়েছেন। তাই স্বজনদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এছাড়াও বিকেল ৩টায় পুলিশ সুপারে কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে তাদের দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় নিখোঁজের বিষয়ে ফতুল্লা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে সেখানেও অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা রনির খোঁজে প্রথমে ফতুল্লা থানায় পরবর্তীতে ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে যাই। কিন্তু সেখানে কেউ আটক নেই বলে আমাদের জানানো হয়।

মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মশিউর রহমান রনি বিরোধী দলের রাজনীতি করে। এজন্য হয়তো পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হোক। অপরাধ ছাড়া তাকে আটক করা হলে তাকে পরিবারের কাছে অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেওয়া হোক।

রনির বিভিন্ন মামলার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি সময়ে রনির বিরুদ্ধে সদর থানা ও ফতুল্লা থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ১১টি মামলা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি মামলায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। আর সবগুলো মামলায়ও একই অভিযোগ। অভিযোগটি হল, সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া। এতেই বোঝা যায় সব মামলা রাজনৈতিক। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর