১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ১৯:৩৫

মেয়ের বিয়ের ঘটকই জরিনা হত্যাকাণ্ডের বাস্তবায়নকারী

সাভার প্রতিনিধি

মেয়ের বিয়ের ঘটকই জরিনা হত্যাকাণ্ডের বাস্তবায়নকারী

সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে বাবাকে ফেলে দিয়ে মেয়ে জরিনা বেগমকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনার বাস্তবায়নকারী জরিনার মেয়ে রোজিনার বিয়ের ঘটক স্বপন। স্বপনের পরিকল্পনা অনুযায়ী জরিনার মেয়ের স্বামী নূর ইসলাম ও শাশুড়ি আমেনা বেগমের সহযোগিতায় যাত্রীশূন্য বাসে উঠিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই'র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

এসময় ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ঘটক স্বপনের মধ্যস্থতায় ৫ বছর আগে নিহত জরিনার মেয়ে রোজিনা ও নূর ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই তাদের দাম্পত্য কলহ লেগে থাকতো। আর এই বিবাদ মেটাতে রোজিনার মা জরিনা প্রায়ই আশুলিয়ায় জামাই নূর ইসলামের বাড়ি আসত। 

সম্প্রতি তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ প্রকট আকার ধারণ করে এবং এজন্য শাশুড়ি জরিনাকে দায়ী করে জামাই নূর ইসলাম ও তার মা আমেনা বেগম। পরে এ বিষয়ে ঘটক স্বপনের সঙ্গে আলোচনা করে। এসময় তারা পরিকল্পনা করে জরিনাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যেন সে আর তাদের বাড়িতে না আসে। তখন ঘটক স্বপন বলেন এটা কোনো বড় বিষয় না। মাত্র ১০ হাজার টাকা দাও বিষয়টি সমাধান করে দিচ্ছি। কথা অনুযায়ী মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে শাশুড়ি জরিনা হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়নও করেন ঘটক স্বপন।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আরও জানান, ঘটক স্বপন টাকার বিনিময়ে একটি অফরুটের গাড়ি ঠিক করে। সাধারণত সেসব গাড়ির নির্দিষ্ট রুট নেই, যখন যে দিকে যাত্রী পায় তখন সেই দিকে যায়। ঘটনার দিন দুপুরে সিরাজগঞ্জের নিজের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি আশুলিয়ায় আসেন জরিনা ও তার বাবা আকবর আলী মণ্ডল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিকেল ৫টার দিকে বাবাকে নিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন জরিনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী নূর ইসলাম শাশুড়ি জরিনা ও নানা শ্বশুর আকবর আলীকে ওই বাসে তুলে দেন। বাসে দুইজন হেলপার একজন সুপারভাইজার ও ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ ছিল না। চুক্তি অনুযায়ী হেলপার ও সুপারভাইজাররা মিলে আকবর আলীকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর জরিনাকে হত্যা করে আরেকটু দূরে ফেলে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিকল্পনাকারী মেয়ের জামাই নূর ইসলাম (২৯), তার মা আমেনা বেগম (৪৮) এবং ঘটক স্বপনকে গেফতার করা হয়েছে। এছাড়া যেহেতু জরিনার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা হাতে পাইনি এবং সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়া চারজনকে গ্রেফতার করা যায়নি, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করে জরিনাকে হত্যা করা হয়েছে।

বাসে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া চারজনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে, তবে আশা করছি খুব দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এরইমধ্যে বাসটি আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৯ নভেম্বর) আশুলিয়ায় চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ফেলে মেয়েকে অপহরণের পর হত্যা করে পালিয়ে যায় চালক ও তার সহযোগীরা। পরে আব্দুল্লাপুর-বাইপাইল মহাসড়কের মরাগাঙ্গ এলাকা থেকে পুলিশ মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত জরিনা খাতুন সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকার আকবর আলী মণ্ডলের মেয়ে। 

এঘটনায় নিহতের মেয়ের জামাই নূর ইসলাম বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১০ নভেম্বর রাতে আশুলিয়া থানা থেকে মামলাটি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ১১ নভেম্বর মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে তা পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই'র কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর