১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ২২:০১

১৬ বছর ধরে শিকলবন্দী কামরুল, সহযোগিতা চায় পরিবার

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

১৬ বছর ধরে শিকলবন্দী কামরুল, সহযোগিতা চায় পরিবার

বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টি, গ্রীষ্মেও দহন, পৌষের শীতেও সবসময় খোলা আকাশের নীচেই কাটাতে হয় প্রতিবন্দ্বী কামরুলকে। মা সামসুন্নাহার বেগম তার একমাত্র সন্তান প্রতিবন্ধী কামরুলকে খোলা আকাশের নীচেই সন্তানকে আগলে রাখেন। কারণ কামরুলের গলায় লোহায় শিকল। সে শিকল একটি গাছের সাথে আটকানো। বৃষ্টির পানিতে জবুথবু হলেও কামরুলের মুখে হাসি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সদর পৌর এলাকার দিনমজুর কামাল মিয়ার বাড়িতে গেলে এরকম করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। জানা গেছে, মাত্র ৩ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় কামরুল। জ্বরের পর থেকে কামরুল ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ‘প্রতিবন্ধী’ হিসেবে গলায় শিকলবন্দী করে গাছের সাথে বেঁধে রাখতে হয় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। বাধ্য হয়েই তাকে বেঁধে রাখে তারই পিতা-মাতা।

কামরুলের পিতা মো. কামাল মিয়া জানান, শিকলবিহীন রাখলে সামনে যা পায় তাই সে খেয়ে ফেলে। গাছের লতা-পাতা বা খাবার অযোগ্য যে কোনো জিনিসই সে খেয়ে ফেলে। অনেক সময় চলে যায় অজানা গন্তব্যে। নষ্ট করে ফেলে ঘরের আসবাবপত্র। তাই তাকে খোলা আকাশের নীচে রাখতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।

জানা গেছে, অসুস্থ্য হবার পর থেকে টাকার অভাবে এ যাবৎ ঝাঁড়-ফুঁক আর টোঁটকা ছাড়া আর কোনো বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। এ জন্য দিনে দিনে কিশোর কামরুলের মানসিক অসুস্থ্যতা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ নিয়ে দিনমুজুর পিতা কামাল মিয়া ও মা শামসুন্নাহারের চোখে ঘুম নেই। তারা সমাজের বিবেকবান মানুষের সহায়তা চেয়ে আসছেন ১৫ বছর আগে থেকেই, সেভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। মানসিক চিকিৎসকদের মতে, তাকে সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। আর এ জন্য চাই ৩ লাখ টাকা। 

প্রতিবেশী সাব মিয়া মেম্বার বলেন, শিশুকাল থেকেই ছেলেটার কষ্ট। ছেলেটার এমন বন্দী জীবন দেখলে খুবই খারাপ লাগে। বিত্তবানরা যদি তার সাহায্যে এগিয়ে আসতো কিংবা সরকারি কোনো মহল যদি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিত তাহলে ছেলেটা আবারও সুস্থ জীবনে ফিরে আসতো। এলাকাবাসী জানান, কামরুলকে যেখানে বেঁধে রাখা হয়েছে তার ১০০ গজ দূরে ব্র্যাক, আশা, উদ্দীপন, সিডো নামে বড়বড় সব এনজিও’র শাখা অফিসও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের শপথে বলীয়ান হলেও কামরুলের জন্য তেমন কিছু করেনি।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর