১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৮:১৯
ভেতরে তৎপর দালাল চক্র

নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতাল প্রবেশমুখে বর্জ্য ও বালির স্তুপ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতাল প্রবেশমুখে বর্জ্য ও বালির স্তুপ

প্রবেশমুখের বাম দিকে ময়লার স্তুপ। দুর্গন্ধে রোগীদের বেহাল দশা। এর কিছুটা সামনেই উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে বালির স্তুপ। ভেতরে রোগীদের ভীড়ে দালালদের উপদ্রব আর জরুরী বিভাগ লগোয়া স্থান অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। ডায়ারিয়া ওয়ার্ডের সামনেরও পরিবেশ অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন। পানি জমে যেন মশার উৎপাদনস্থলে পরিণত। অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কটে রোগীরা রয়েছেন ভোগান্তিতে। 

শহরের একপ্রান্তে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালটি এ ধরনের নানা সমস্যায় জর্জরিত। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে কিছুটা ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় অত্র হাসপাতালে চিকিৎসার মান অত্যন্ত ভাল। যে কারণে সবসময়ই রোগীদের প্রচন্ড চাপ দেখা যায়।
 
ভুক্তভোগী রোগীরা জানান, শহরের একপ্রান্তে নিতাইগঞ্জে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালটির প্রবেশ মুখের বাম পাশে দীর্ঘদিন ধরেই একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। ওই সেমিপাকা ঘর ও একটি শেড নির্মাণের কাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু নির্মাণ কাজ চলছে অনেক ধীরে। ৬ মাসের বেশী সময় ধরেই এভাবে উন্মুক্তভাবে বালি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। নির্মাণাধীন সেমি পাকা ঘরের সামনেই হাসপাতালটির ভবনের লগোয়া স্থানে বর্জ্যের স্তুপ। এর কিছুটা সামনেই হাসপাতালের সামনে উন্মুক্তভাবেই আস্তর (সিলিকন) বালি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে যেমন রোগীদের বেহাল দশা তেমনি উন্মুক্তভাবে থাকা বালি দমকা বাতাসে উড়ে শরীরে লাগছে রোগীদের। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলায় কয়েকজন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের লাইন। এর মধ্যে দ্বিতীয় তলায় এক চিকিৎসকের কক্ষের সামনে লাইনে দাড়ানো এক রোগী জোরে চিৎকার করে বলছেন, ‘ওই মিয়া দালালী করার আর জায়গা পাওনা আমরা আধা ঘন্টার বেশী লাইনে দাড়িয়ে আছি আর তুমি এর মধ্যে অন্য লোক ঢুকিয়ে দাও’। তার চিৎকার চেচামেচিতে পরে এক চিকিৎসকের সহকারী ওই দালালকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে বলে।

রোগীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, পাশের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারী ক্লিনিকের নিয়োজিত দালালদের উৎপাত সবসময়ই থাকে। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কমিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারী ক্লিনিকে রোগীদের পাঠানোর অভিযোগ করলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী।  

জরুরী বিভাগের পাশে দেখা যায় অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন। এছাড়া ডায়ারিয়া ওয়ার্ড সংলগ্ন হাসপাতালের অভ্যন্তরেও মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানটি স্যাতসেতে ও অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন। পানি জমে যেন মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটিতে দু’টি এম্বুলেন্স দীর্ঘদিন ধরেই বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একটি এম্বুলেন্স সচল থাকলেও মাঝেমধ্যেই সেটি বিকল হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগে হাসপাতালের এম্বুলেন্স চালকরা নিজেরাই কারসাজির মাধ্যমে চালু করেছেন প্রাইভেট এম্বুলেন্স সার্ভিস।   
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডা. এহসানুল হক জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক ৩টি ঘর নির্মাণের কাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। যার মধ্যে একটিতে পচনশীল বর্জ্য থাকবে এবং অপর একটিতে ক্লিনিকালি বর্জ্য ধ্বংস করা হবে। যে কারণে বর্জ্য ও বালির স্তুপ জমে রয়েছে। এছাড়া বর্জ্য নেয়ার দায়িত্ব নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের। কিন্তু জায়গার সঙ্কটে তারাও সবসময় সার্ভিস দিতে পারেনা। একদিন বর্জ্য না নিলেই স্তুপ হয়ে যায়। এছাড়া আশেপাশের অনেক ভবন থেকেও হাসপাতালের ভেতরে বর্জ্য ফেলে যেটা একটা বড় সমস্যা। আমরা সম্প্রতি এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেছি। 

দালাল চক্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানেই রয়েছি। দালালরা আগের মতো আর ভীড়তে পারেনা। আমাদের একজন কর্মচারীর হাতে লাঠি রাখতে বলেছি যাতে দালাল দেখলে লাঠি নিয়ে তাড়া করে। 

এম্বুলেন্স সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি আমাদের ও অপরটি সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছিল। কিন্তু ওই দু’টি দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে একটি সচল আছে। আরো একটি নতুন মানসম্পন্ন এম্বুলেন্স প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি শীঘ্রই হাসপাতালে একটি এম্বুলেন্স পাওয়া যাবে। 

তিনি আরও বলেন, ত্রুটি বিচ্যুতি কিছু থাকলেও বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান খুবই ভাল। যে কারণে রোগীদের চাপও অনেক বেশী। অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে যেখানে দুপুরে রোগীদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়না সেখানে ১০০ শয্যায় দুপুরেও অনেক রোগী আসতে দেখা যায়। তিনি অত্র হাসপাতালের চিকিৎসার মান আরো উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান। 

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর