২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৮:৪৭

চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিলেন ডিএমপি কমিশনার

অনলাইন ডেস্ক

চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিলেন ডিএমপি কমিশনার

যতই সময় গড়াছে, ততই বেড়ে চলছে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৭ জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে আভাস পাওয়া গেছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন আরও অনেকে।

রাতভর ঘটনাস্থলে ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া। পরে তিনি সাংবাদিকদের সেই ভয়াবহ রাতের কথা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, সারা দেশ এবং জাতি মর্মাহত। এই মর্মান্তিক ঘটনা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।

তিনি বলেন, সারারাত আমাদের ফায়ার ব্রিগেডের ও পুলিশের যথাযথ উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতার কারণে আমরা আরও ভয়াবহ ক্ষতি এড়াতে পেড়েছি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মূল ঘটনাটি অবশ্যই মর্মান্তিক। তবে এর কারণ আমরা জানি- প্রথম কারণটি একটি প্রাইভেটকারের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে যে আগুন লেগেছিল আরেকটি পিকআপভ্যানে। যেখানে প্রায় ৮-১০টা সিলিন্ডার পরিবহন করছিল। ওই সিলিন্ডারগুলো একযোগে বিস্ফোরিত হয়ে পাশে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার ছিল এবং এসির কম্প্রেসারের ইউনিট ছিল সেখানে লেগে আগুন লেগে যায় ইলেকট্রিক তারে।

তিনি বলেন, পাশে একটি হোটেল ছিল। এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে হোটেলটিতেও। সেখানে ৪টি বড় সিলিন্ডার ছিল রান্নার। সেগুলোতেও আগুন লেগে যায়। এর ফলে ভয়াবহভাবে পুরো এলাকায় আগুন ছড়িয়ে যায়। পথচারী যারা ছিল, রিকশাযাত্রী, কারে যারা ছিল রাস্তায় তারা নিজেকে বাঁচাতে পেড়েছেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই আগুন গিয়ে লেগেছে বড় ৬ তলাবিশিষ্ট একটি ভবনে। এবং এর আশপাশের ভবনে। সেটিও হয়তো খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যেত। ওই ভবনটির নিচতলায় ছিল প্লাস্টিকের দানা, তিনতলায় ছিল বডি স্প্রের গোডাউন। আমার মনে হয়, মিলিয়নস মিলিয়নস বডি স্প্রে ওখানে মজুদ ছিল।

তিনি বলেন, আগুন যখন লাগে আমি রাতে ওখানে ছিলাম। ফায়ার ব্রিগেডের ডিজি ছিলেন, লালবাগের ডিসি সাহেবসহ আমাদের গোয়েন্দার অ্যাডিশনাল কমিশনার ও স্থানীয় এমপি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা দেখেছি যে- প্রতি সেকেন্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের আওয়াজের মতো আগুন উঠছে এবং বিস্ফোরণ হচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের তখন একটিই চ্যালেঞ্জ ছিল ফায়ার ব্রিগেডের কাছে আমাদের কাছে যে আশপাশের বিল্ডিংগুলো আমরা কীভাবে সেফ করব। আর যেভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে, এতে ওই ভবনটি যদি ধসে পড়ে তাহলে আশপাশের অন্য বিল্ডিংয়ের লোক মারা যাবে। যদিও আমরা অন্যান্য বিল্ডিংয়ের লোকদের নামিয়ে এনেছিলাম। যারা মারা গেছেন তারা পথচারী। আর যারা ওই বিল্ডিংয়ের চারতলা-পাঁচতলায় ছিলেস তাদের মধ্যে কেউ নামতে গিয়ে মরেছে আবার কেউ আগুনের স্ফুলিঙ্গ গায়ে লেগে মারা গেছে।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন এই ঘটনাটি কারও কাম্য নয়। আমরা আমাদের ডিএমপির মোবাইল কোর্ট, র‌্যাবের, জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট, সিটি কর্পোরেশনের মোবাইল কোর্ট, বিএসটিআইয়ের মোবাইল কোর্ট, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল কোর্টসহ নানাবিধ মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এই এলাকায় এই ধরনের অনুমোদিত কারখানাগুলো রয়েছে তার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি। জরিমানা হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, উচ্ছেদ হচ্ছে। সেটি কিন্তু চলমান। তারপরও দুই মাস বন্ধ থাকল আবার স্থানীয়ভাবে অগোচরে, চুরি করে এ ধরনের কর্ম আবার শুরু হয়।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা যারা গোপনে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এগুলো শুরু করে অনেকক্ষেত্রে হয়তো প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয় না। এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য চাই একটি সমন্বিত উদ্যোগ।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই ধরনের রাসায়নিক যে কোনো কারখানা দিতে হলে এটি বিস্ফোরক অধিদফতরের অনুমতি দরকার হয়। লাইসেন্সের দরকার হয়। এবং সেই লাইসেন্স দেয় সিটি কর্পোরেশন। প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এবং সেটাও করা হয় সিটি কর্পোরেশন থেকে।

তিনি বলেন, আমরা যারা পুলিশ আছি আমরা যারা সারাক্ষণ এলাকায় প্যাট্রল করি। আমরা এগুলো দেখভাল করি। যখনি মনে হয় কোনো বিষয় জননিরাপত্তা হুমকিস্বরূপ তাৎক্ষণিক আমরা উচ্ছেদ করি। তবে এক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের দুর্বল জায়গাটি হচ্ছে এসব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছিল। অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আবার এসব শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি- সমন্বিত উদ্যোগের পাশপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব রয়েছে যে এই এলাকায় জননিরাপত্তার হুমকিস্বরূপ সব কারখানা বা গোডাউন সম্পর্কে সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরাও পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো এলাকায় একটি জরিপ চালাব যে এই এলাকায় কোথায় কোথায় আছে সেক্ষেত্রে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সিটি কর্পোরেশন, বিস্ফোরক অধিদফতর তাদেরকে আমরা সমন্বয় করব। কারণ মূল ইনিশিয়েটর হচ্ছে তারা। আমাদের কাজ হচ্ছে এ বিষয়ে তাদের আইনি সহায়তা দেয়া, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সেগুলোকে উচ্ছেদ করা। সেগুলো করার জন্য আমরা তৎপর রয়েছি।

বিডি প্রতিদিন/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর