২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ২০:৩০

রাজশাহী রেলস্টেশন ধূমপানমুক্ত করার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী রেলস্টেশন ধূমপানমুক্ত করার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের
ডেভিড হালদার। তিনি জানেন না রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরের জায়গাটি একটি পাবলিক প্লেস আর সেখানে ধূমপান নিষিদ্ধ। ডেভিড হালদারের মত আব্বাস, নয়ন, মোকাররমসহ বেশ কয়েকজন রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে দেদারছে ধূমপান করছে। দূর-দূরান্ত থেকে স্টেশনের ভেতরে আসা অনেক লোকের জটলার মধ্যেই তাদের এমন স্বাস্থ্যহানিকর কাজ। 
 
শুক্রবার বিকাল ৩টার দৃশ্য এটি। এমন ধূমপানের দৃশ্য রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে প্রায় সার্বক্ষণিক। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, জনগণ নিজেরা সতর্ক না হলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধ করা কঠিন। তারপরও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অনেক যাত্রী রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে অবস্থান করছেন। তাদের অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করছেন। কেউ গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে স্টেশনের ভেতরে অপেক্ষা করছেন, কেউ ট্রেন ধরার জন্য যাচ্ছেন প্লাটফর্মে। আবার কেউ বা ট্রেন থেকে নেমে প্লাটফর্ম হেঁটে স্টেশনের অভ্যন্তর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এমন লোকসমাগমের জায়গায় ধূমপায়ীদের দেদারছে ধূমপান করার দৃশ্য দেখে অনেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 
 
খুলনার পাইকগাছা যাবেন যাত্রী আব্দুল্লাহ বিন মারুফ। গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে তিনি রেলওয়ে স্টেশন ভবনে অবস্থান করছেন। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ভবন একটি পাবলিক প্লেস হওয়া সত্ত্বেও লোকজন দেদারছে ধূমপান করছে। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ দেখছি না।’ 
 
স্টেশনের ভেতরে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র যৌথ উদ্যোগে কিছু সতর্কীকরণ সাইনেজ আছে। কিন্তু রেলওয়ে ভবনের প্রবেশ ও বাহির পথে আইন অনুযায়ী ‘ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ সম্বলিত নোটিশ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও এর কোনোটিই দেখা যায়নি। 
 
আব্দুল আওয়াল নামে অপর এক যাত্রী বলেন, ‘রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেস। তাই স্টেশন ভবনের প্রবেশ ও বাহির পথে ধূমপানের বিধিনিষেধ সম্পর্কিত সতর্কীকরণ বাণী থাকা জরুরি।’ 
 
রেলওয়ে স্টেশনের ভেতরে এভাবে ধূমপান করা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘রেলওয়ে স্টেশনের অভ্যন্তরে নারী-শিশু থেকে শুরু করে নানান বয়সী মানুষের সমাগম সব সময় বিরাজমান। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসে ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর কারণে অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
 
রাজশাহী বার কাউন্সিলের সভাপতি এ্যাড. লোকমান আলী বলেন, ‘২০০৫ সালে (সংশোধন ২০১৩) ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) নামে একটি আইন পাস হয়েছে। আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেস বা পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবে না। কেউ করলে তিনশত টাকা অর্থদণ্ড করার বিধান রয়েছে।’ 
 
তবে রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভবনের অভ্যন্তরে যারা ধূমপান করে তারা বিবেক বিবর্জিত। তাদের ভাবা উচিত- এতে নিজেরা (ধূমপায়ী) ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি তাদের আশেপাশে যারা অবস্থান করে তাদেরও স্বাস্থ্যহানি ঘটছে। 
 
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনকে ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলেও জানান স্টেশন ম্যানেজার আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যারা ধূমপান করে তাদেরকে আগে সচেতন হতে হবে। কেননা- যারা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করেন তাদেরকে বলতে গেলে উল্টো খারাপ কথা শুনিয়ে দেয়। স্টেশন ভবন ধূমপানমুক্ত করতে আমাদের পদক্ষেপ তো থাকবেই। পাশাপাশি এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
 
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্টেশন ভবনকে আমরা ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতেই পারি। স্টেশনের ভেতরে বড় বড় অক্ষরে সতর্কীকরণ সাইনেজে লেখা থাকবে- ‘এটি একটি ধূমপানমুক্ত এলাকা, এখানে ধূমপান নিষিদ্ধ।’ তারপরও স্টেশনের অভ্যন্তরে কাউকে ধূমপান করতে দেখলে ধূমপানকারীদের পাকড়াও করতে আমাদের নিরাপত্তাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হবে।
 
 
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর