নানা আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে উদ্ধার হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খালের দখল হওয়া অংশ। খালের জায়গা দখল করে বিএনপির নামে যারা সাইনবোর্ড লাগিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশেই ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক খালের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার ও খালি করেন এবং বিএনপির নামে যারা ব্যানার লাগিয়েছিল-তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি (নং-৮০, ১৪/০৮.২৪) দায়ের করেন।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে রামচন্দ্রপুর খালের দখল হওয়া অংশ উদ্ধার করেন আমিনুল।
এর আগে মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মোহাম্মদপুর এলাকার সাত মসজিদ হাউজিং ইউনিট ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় সাদিক এগ্রোর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত খালের জায়গায় টিনের ঘরে ঝুলছে বিএনপির সাইনবোর্ড। এমন সংবাদ প্রচারের পর তা সরেজমিনে খোঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তার প্রেক্ষিতে দুপুর দেড়টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক সেখানের অবৈধ সকল স্থাপনা ভেঙে দেন ও ফেলে দেন সব রকমের সাইনবোর্ড।
বিএনপি নেতা আমিনুল হকের দায়ের করা জিডিতে বলা হয়, বিএনপির মোহাম্মদপুর থানাধীন ৩৩ নং ওয়ার্ড এর সাত মসজিদ হাউজিং ইউনিটের পক্ষ থেকে এই মর্মে সাধারণ ডায়েরির আবেদন করছি যে, গত ১৩ আগস্ট রাত ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা মোহাম্মদপুর থানাধীন ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাত মসজিদ হাউজিং ওয়ার্ড ইউনিটের ব্যানার ব্যবহার করে উক্ত খালি জায়গা দখল করে। প্রকৃতপক্ষে উক্ত জায়গাটি দখলের বিষয়ে বিএনপির মোহাম্মদপুর থানাধীন ৩৩নং ওয়ার্ড ও সাত মসজিদ হাউজিং ইউনিটের কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই।
এ সম্পর্কে আমিনুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে নতুন করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা চাই না স্বৈরাচারমুক্ত এই স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজি বা দখলদারিত্ব হোক। কিন্তু নব্য বিএনপিধারী কতিপয় ব্যক্তি বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এ ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজনও জড়িত থাকতে পারে। আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে যেখানেই এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি, সেখানেই সরেজমিনে ছুটে গিয়ে শক্ত হাতে তা দমন করছি।
আমিনুল হক এ ব্যাপারে বিএনপির সকল নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উদ্ধার করা খালের অংশে দু’টি টিনের ছাপড়া ঘর তোলা হয়েছে ও বিভিন্ন অংশে বাঁশ পুঁতে রাখা হয়েছে ঘর তোলার জন্য। এছাড়া কিছু রিকশাও এনে রাখা হয়েছে সেখানে। খুলে ফেলা হয়েছে গণপূর্তের নোটিশবোর্ড, যেখানে উল্লেখ ছিল ‘খালের এই অংশটি সরকারের খাস জমি’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উচ্ছেদের আগে যারা এখানে বস্তি করে থাকতেন, তারাই এসে আবারও এসব স্থাপনা তুলছে। তবে এই পুনর্দখল শুরু হয়েছিল বিএনপির ব্যানারে দু’টি টিনশেড ঘর তৈরি থেকে।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরের দিন বিকালেই একদল লোক ওই জায়গায় ঘর বানানোর কাজ শুরু করেন। এর মাঝে প্রথম ঘরটিতে বিএনপির নামে একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে এই ঘরে কেউ না আসলেও গত কয়েকদিন লোক আনাগোনা শুরু করে। তারা ঘরটিতে কয়েকটি চেয়ার রেখে যান। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতারা ঘর ওঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তারা ঘর তোলার বিষয়ে অবগত নন বলেও জানান।
এ বিষয়ে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, খালের জায়গা দখল করে ঘর তৈরি করতে কাউকে বলা হয়নি। কারা করেছে খোঁজ নিচ্ছি। ওইখান থেকে ব্যানার সরিয়ে দিয়েছি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত