সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এই নিয়ে টানা ৫০ ঘণ্টা ধরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে বাইপাইল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবরোধের কারণে পার্শ্ববর্তী বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়ক ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সবমিলিয়ে ৩ সড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক। এসব সড়কে বেশিরভাগই মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ব্যাংক ও স্বল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। যানজটের কারণে অনেককেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে রওনা হতে দেখা গেছে।
এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। কোনো ধরনের আশ্বাস না পেয়ে শ্রমিকরা এখনও অবরোধসহ সড়কে অবস্থান করছেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, ২৭ তারিখের ইস্যু করা নোটিশের মাধ্যমে গত ২৮ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের সকল কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এসময় শ্রমিক কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ ও সার্ভিস বেনেফিটসহ ক্ষতিপূরণ ৩০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের দিন ধার্য করা হয়। চুক্তিমত শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনেফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের আরও তিন মাস সময় চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে, শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করলেও শ্রমিক নেতাদের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা উৎকোচ হিসেবে প্রদানের দাবি করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
অবরোধকারী শ্রমিকরা আরও জানায়, আজকে তিন দিন ধরে আমরা খেয়ে না খেয়ে মহাসড়কে অবস্থান করছি। কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা পরিশোধের তারিখ দিয়ে সেই তারিখ আবার পরিবর্তন করে ৩ মাস সময় বর্ধিত করেছে। এরই মধ্যে মালিকপক্ষের লোকজন কারখানার বিভিন্ন মেশিনারিজ ও ঝুটসহ মূল্যবান মালামাল বিক্রি করে দিয়েছে। এখনো কোটি কোটি টাকার মেশিন ভিতরে রয়ে গেছে। সেখানে আমাদের পাওনা মাত্র ২৬ কোটি টাকা। আমাদের বেতন পরিষদের নির্দিষ্ট তারিখ দেয়ায় আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আশুলিয়ায় এসেছি। এখানে আমাদের থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে মহাসড়কেই অবস্থান করছি। দেশের সরকার কিংবা বিজিএমইএ এর এমন কোন লোক নেই যারা আমাদের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব নিবেন। আমাদের অনেকেই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে এখানে এসেছি। যতক্ষণ আমাদের পাওনা পরিশোধ করা না হবে ততক্ষণ আমরা সড়কেই অবস্থান করবো।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, একজন লোকের জন্য আমরা ছয়-সাত হাজার শ্রমিক তিন দিন ধরে রাস্তায়। সড়ক অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় আটকে পড়া পরিবহনে থাকা কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাস্তা অবরোধ করে রাখতে চাই না। অবিলম্বে বার্ডস গ্রুপের মালিক মোস্তফাকে গ্রেফতার করে আমাদের পাওনা পরিশোধ করা হোক।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে শ্রমিকরা ৩ দিন ধরে নবীনগর চন্দ্র মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু শ্রমিকরা দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত সড়ক ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত