২৮ জুন, ২০১৬ ১১:৪৮

হকার ভবঘুরেদের দখলে ফুটওভারব্রিজ

মানিক মুনতাসির

হকার ভবঘুরেদের দখলে ফুটওভারব্রিজ

ঘটনা-১. বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজ। রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। ব্রিজের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই উৎকট দুর্গন্ধ। ভনভন করে মাছি উড়ছে। সেই সঙ্গে চোখে পড়ল একাধিক ভবঘুরে ব্যক্তি শুয়ে আছেন। একজন আরেক জনের গায়ে ঘেঁষে শুয়ে আছেন। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। মুখের সামনে ঘুরছে মশা-মাছি। ওদের পাশেই প্রস্রাবের গন্ধ। ব্রিজের অপর প্রান্তে আরও তিনজন কিশোর র‌্যালিংয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। তারা পলিথিন ব্যাগের ভিতর থেকে কিছু একটা পান করার চেষ্টা করছে। তাদের গায়ে ময়লার ছোপ, নোংরা কাপড়। খালি পা, ছেঁড়া প্যান্ট, উষ্কখুষ্ক চুল। এসব ভবঘুরের অত্যাচারে অধিকাংশ ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করা মুশকিল। ঘটনা-২. স্থান নিউমার্কেট। বেলা সোয়া ১২টা। বলাকা সিনেমা হল সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজের ওপর হাঁটার পথ নেই। দুই পাশ থেকে হকার বসেছেন পসরা সাজিয়ে। রোজার মাসে পথচারী ও ক্রেতাদের ভিড়। কদিন পরই ঈদ। ভিড় ঠেলে কোনোদিকে যাওয়ার সাধ্য নেই। ব্রিজের প্রায় পুরোটাজুড়ে প্লাস্টিক কিংবা, চটের বস্তা বিছিয়ে পণ্য পসরা সাজিয়েছেন হকাররা। কেউ আবার দাঁড়িয়ে পণ্য বিক্রি করছেন। একই অবস্থা ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজেও। এটি শুধু রাজধানীর এক বা দুটি ফুটওভারব্রিজের দৃশ্য নয়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঢাকার বেশির ভাগ ফুটওভারব্রিজ ভবঘুরেদের দখলে। পল্টন, প্রেসক্লাব, পরীবাগ, নিউমার্কেট, শাহবাগ, টিকাটুলী, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী, আবদুল্লাহপুর, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটওভারব্রিজে নিরিবিলি সময়ে নেশাখোররা শুয়ে-বসে সময় কাটায়। শুধু তাই নয়, ব্রিজের ওপর বসেই এসব ভবঘুরে মানুষ নেশাও করেন।

অন্যদিকে এসব ফুটওভারব্রিজে হকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। অনেক হকার টং বসিয়ে স্থায়ী দোকান বানিয়ে ফেলেছে, দেখার কেউ নেই। নেশাখোর আর ভবঘুরে মানুষের অত্যাচারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে পারেন না পথচারীরা। ফলে ফুটওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। অনেক সময় সন্ধ্যার পর এসব ফুটওভারব্রিজে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। কোনো কোনো ব্রিজে স্থায়ী ঝুপড়ি ঘরও বেঁধে বসেছেন ভবঘুরেরা। সেখানেই কাটাচ্ছেন দিনরাত। ফলে ব্রিজের পরিবেশ নোংরা হচ্ছে। অনেক সময় ব্রিজের উপরেই মলমূত্রও ত্যাগ করছেন এসব ভবঘুরে। পথচারীরা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভবঘুরেদের দখলে যাওয়া ওভারব্রিজগুলোতে পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। ভবঘুরেরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের নেশা করছে ব্রিজে বসে। রাতে আবার এদেরই কেউ কেউ চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

বিডি-প্রতিদিন/২৮ জুন, ২০১৬/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর