১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ১১:১৭

হাঁটাপথ হারিয়েছে পথিক

মানিক মুনতাসির

হাঁটাপথ হারিয়েছে পথিক

নগরীর গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাথ সারা বছরই হকারদের দখলে থাকে। ছবি: জয়ীতা রায়

রাজধানী ঢাকার পথিকরা পথ হারিয়েছে। তাদের হাঁটাপথ চলে গেছে ব্যবসায়ীদের দখলে। নগরীর ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত রাখতে পারেননি দুই সিটির মেয়ররা। ফলে, নগরজুড়ে সাধারণ মানুষের হাঁটার জায়গা নেই। ফুটপাথ এখন কোটি কোটি টাকার লোভনীয় বাণিজ্যের জায়গা।  

নগরীর ১৬৩ কিলোমিটার ফুটপাথের ১০৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ফুটপাথই এখন অবৈধ দখলে। রাজধানীর ২২৮৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫৭২ কিলোমিটারেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ছত্রছায়ার বসেছে পণ্যের পসরা। একদিকে সড়কে যানজট অন্যদিকে ফুটপাথ অবৈধ দখলের ফলে পথচারীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিড়ম্বনায়। ফুটপাথ দখল করে অবৈধভাবে পসরা সাজানো হকারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে।

ফুটপাথের দোকানিরা জানান, বর্তমান স্থানভেদে ফুটপাথের পজেশন বিক্রি হয়েছে আট হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বেশির ভাগ পজেশন বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার টাকায়। ভ্যান গাড়িতে করে ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকানিদের পর্যন্ত টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে হয়। টাকার বিনিময়ে ব্যবসা করতে হয় চা দোকানিদেরও। এ ছাড়াও প্রতিদিন প্রতিটি এলাকা থেকে ভাড়া আদায় করে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর ফুটপাথ অবৈধ দখল থেকে আদৌ মুক্ত হবে কিনা সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। প্রতিনিয়তই বাড়ছে ফুটপাথ দখল। সিটি করপোরেশন কিংবা রাজউক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও উচ্ছেদের ২৪ ঘণ্টা পর না যেতেই দখল হয়ে যাচ্ছে আবারও। সম্প্রতি মতিঝিল, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার ফুটপাথ থেকে অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো আবার দখল হয়ে যায়। ফলে ঢাকার ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, নিউমার্কেট, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, শাহজাহানপুর, শাহবাগ, খিলগাঁও, ধানমন্ডিসহ প্রায় সব রাস্তার ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে অবৈধ দোকানপাট। কোনো কোনো এলাকায় তো হেঁটে চলারও উপায় নেই। পথচারীরা নিরুপায় হয়ে মূল রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটছেন। ফলে যখন-তখন ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন চলাচল।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শুধু মূল রাস্তার ফুটপাথই যে দখল হয়েছে তা নয়, কোনো কোনো জায়গায় মহল্লার ভিতরে ছোট ছোট অলিগলির ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট। কোনো কোনো এলাকায় তো ফুটপাথে স্থায়ী অবকাঠামো পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো নজরদারি। খিলগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ, সায়েদাবাদসহ বেশির ভাগ আবাসিক এলাকায় তো মহল্লার ভিতরের রাস্তার ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে মাছের বাজার। আর খিলগাঁও রেলগেটের কাছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে মুরগির দোকান। এতে পথচারীদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। যত্রতত্র এমন দোকানপাট বসাতে পথচারীদের সমস্যার পাশাপাশি বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে ঢাকার পরিবেশ। কেননা এসব দোকান পাটের ফেলে দেওয়া ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে চারপাশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জীবিকার সন্ধানে প্রতি বছর যে হারে মানুষ ঢাকামুখি হচ্ছে তাতে রাজধানী মানুষের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। কর্মমুখী মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকায় বাড়ছে ভাসমান মানুষের সংখ্যা। আর এই ভাসমান মানুষই রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাথ দখল করে দোকান পাট বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব ভাসমান মানুষ যারা ঢাকায় আসেন জীবিকার সন্ধানে তাদের নিজ নিজ গ্রামে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এর পাশাপাশি হলিডে মার্কেটগুলো আবার চালু করতে হবে। ইতিপূর্বে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চালু করা ২৫টি হলিডে মার্কেটের মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র একটি। হকারদের পরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসন করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন অবশ্য বলেছেন, হকার পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য এখন তাদের একটি জরিপ করা হচ্ছে।


বিডি প্রতিদিন/১৫ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর