৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০১:১০

ফুটপাথে মোটরবাইক যন্ত্রণা

বিশেষ প্রতিনিধি

ফুটপাথে মোটরবাইক যন্ত্রণা

যানজটের নগরী রাজধানীতে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে হরহামেশাই। আইন মানে না কেউ, সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধা তো অনেক দূরের কথা... ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর রাজপথে মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিশেষ করে ফুটপাথ জুড়ে মোটরবাইকের যথেচ্ছ চলাচল পথচারীদের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে নগরীর রাস্তায় মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী বেড়ে যাওয়ায় পথচারীদের ভোগান্তিও বেড়েছে। যানজটের এ নগরীতে দুই চাকার এই বাহনটির চালকরা দ্রুত গন্তব্যে যেতে ফুটপাথে উঠিয়ে দেন।

অনেক সময় পথচারীদের গায়েও উঠিয়ে দেওয়া হয় মোটরবাইক।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেজিস্টার্ড মোটরসাইকেলের সংখ্যা চার লাখ ৩৭ হাজার ২৬টি। কিন্তু রাস্তায় চলে তার চেয়েও অনেক বেশি। ২০১০ সাল পর্যন্ত নগরীতে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৮১টি। এরপর বছর বছর বাড়ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ২০১৬ সালে রাজধানীতে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে ৫৩ হাজার ৭৩৮টি। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৭৬৪টি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে দেশে এখন মোটরবাইকের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশীয় বাজার বিকাশের পাশাপাশি মোটরবাইক রপ্তানিও শুরু করেছেন দেশীয় উৎপাদকরা। এখন নগরীর যে কোনো ইন্টারসেকশনে সিগন্যাল পড়লেই সব যানবাহনকে পেছনে রেখে সামনের সারিতে এসে দাঁড়ায় শত শত মোটরসাইকেল।

অন্যদিকে নগরীতে বেশির ভাগ দুর্ঘটনার অনুঘটকও এই মোটরসাইকেল। সড়ক নিরাপত্তায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনটি নিয়ে এজন্য মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও শেষ নেই। সর্বশেষ এ নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। গত সপ্তাহে রাজধানীর বিএফ শাহীন কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ফুটপাথে মোটরসাইকেল নিয়ে কেউ উঠলে তাকে ধরে পুলিশে দিন। প্রাইভেট কার চাকা তুলে দিলেও পুলিশে দিন।

অনুষ্ঠানে মেয়র আনিসুল হক বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই উত্তরের ফুটপাথ এমনভাবে গড়া হবে যেন অন্ধ মানুষও সহজে চলতে পারেন। আপনারা নাগরিকরা সহযোগিতা করুন। মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকে বীরদর্পে ফুটপাথে ওঠেন। ফুটপাথে উঠলেই তাকে ধরে পুলিশে দিন। কেউ আইন মানবেন না, মানুষকে তোয়াক্কা করবেন না এখন থেকে আর এসব চলতে দেওয়া হবে না।

রাজধানীর মোটরবাইক চালকরা নির্দ্বিধায় ফুটপাথে মোটরবাইক তুলে দিয়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজটি করেন। এসব বাইক চালক ফুটপাথে উঠে পথচারীদের অনেকটা তাড়িয়ে নিয়ে চলেন। সবচেয়ে জঘন্য বিষয় হলো, পথচারীরা সরে না দাঁড়ালে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে হর্ন বাজাতে থাকেন। অনেক সময় পথচারীরা এই বাইক চালকদের শ্লেষের শিকারও হন। নয়াপল্টনের ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় পেছন থেকে মোটরবাইকের তীব্র হর্ন শোনা যায়। অনেক সময় রাগে-ক্ষোভে সিদ্ধান্ত নিই, যতই হর্ন দিক, রাস্তা ছাড়ব না। কিন্তু একপর্যায়ে হর্নের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে বাইকওয়ালাকে রাস্তা ছেড়ে দিতে হয়।

অনেক সময় বাইক চালককে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছি তার ফুটপাথে চলার কারণ। তিনি নির্বিকার উত্তর দেন, হাতে একটু তাড়া আছে ভাই। তাই ফুটপাথ দিয়ে শর্টকাট যাচ্ছি। ইতিপূর্বে হাই কোর্ট ফুটপাথে মোটরবাইকের অবাধ প্রবেশ নিয়ে একটি রুল জারি করেছিল। ফুটপাথ দিয়ে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। কিছুদিন এ ব্যাপারে পুলিশকে তত্পর দেখা গেলেও এখন পুলিশ নির্বিকার দর্শক। মোটরবাইক চালকরা ফুটপাথে তাদের বাইক তুলে দিলেও পুলিশ বাধা দেয় না। জরিমানাও করে না।

ফুটপাথ পথচারীদের হাঁটার জায়গা। সেখানে মোটরবাইক ওঠানোর দায়ে বাইকওয়ালাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত। যে রাস্তাটি মানুষের হাঁটার জন্য বানানো হয়েছে, সেখানে একটি মোটরবাইক নিয়ে উঠে পড়বেন, আর মানুষকে হর্ন বাজিয়ে সরতে বলবেন, ব্যাপারটা রীতিমতো অপরাধ। দেশে রাজপথে ট্রাফিক আইন ঠিকমতো মেনে চলা মানুষের অভ্যাসে পরিণত করা যায়নি বলেই কিছু মানুষ রাজপথে যা খুশি তা-ই করার সাহস দেখাচ্ছেন। ফুটপাথে মানুষের পথ চলাকে অগ্রাহ্য করে মোটরবাইক তুলে দেওয়াও অনেকটা তাই-ই। তবে সম্প্রতি দুই সিটি করপোরেশন নগরীর সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি ফুটপাথ উঁচু করে পথচারীদের হেঁটে চলার উপযোগী করে তুলছে। এর ফলে ফুটপাথে মোটরবাইক চালকদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর