৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১০:১৪

পুকুর ভরাট করে নগর উন্নয়ন!

রাহাত খান, বরিশাল

পুকুর ভরাট করে নগর উন্নয়ন!

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিয়ম মানা হচ্ছে না, ভরাট করা হচ্ছে বরিশাল কলেজের বিশাল পুকুর।

২০১০ সালে মাস্টারপ্ল্যান হলেও বরিশাল নগরীতে সে অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অবকাঠামো নির্মাণের আগে মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ না করায় খাল-পুকুর-জলাশয় ধ্বংস করে উন্নয়ন হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে।

মাস্টারপ্ল্যানে পুকুর জলাশয় রক্ষা এবং শ্রেণি পরিবর্তন না করার কথা বলা থাকলেও মানা হচ্ছে না ওই নিয়ম। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ফকিরবাড়ি রোডে প্রায় এক একর আয়তনের রাখাল বাবুর পুকুরের চারপাশের বড় একটা অংশ ভরাট করে উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। ইতিমধ্যে পুকুরের পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ ফুট বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। চলছে মাটি ভরাটের কাজ।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী মানবেন্দ বটব্যাল জানান, ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময় বরিশাল নগরী বগুড়া-আলোকান্দা মৌজায় প্রায় ৮০ শতাংশ জমির ওপর রাখাল বাবুর পুকুরটি খনন করা হয়েছিল খাবার পানির চাহিদা মেটাতে। ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি রক্ষা করা নগরবাসীর দায়িত্ব। বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বরিশালে অনেক ক্ষেত্রেই মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হয় না। পরিকল্পিত নগরী গড়তে নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং নগর ভবনের মধ্যে সমন্বয় থাকাও প্রয়োজন। বরিশাল নগর সৌন্দর্য রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন অভিযোগ করেন, নগরীর পুকুরগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ভরাট-দখল দূষণে অনেক পুকুর হারিয়ে গেছে। জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে সরকারি বরিশাল কলেজের পাশে থাকা বিশাল পুকুর। সেখানে পুকুরের অর্ধেকের বেশি ভরাট হয়ে গেছে। মাস্টারপ্ল্যানে এ পুকুরগুলো সংরক্ষণের কথা বলা হলেও নগর কর্তৃপক্ষ নজর দিচ্ছে না। ফকিরবাড়ি সড়কের রাখাল বাবুর পুকুরটির পশ্চিম পাশের একাংশ আগেই ভরাট হয়ে গেছে। নতুন করে ফুটপাথ নির্মাণের নামে পুকুরের বড় একটা অংশজুড়ে পাইলিং করে ভরাট করা হচ্ছে। তিনি পুকুর পাড়ে ফুটপাথ নির্মাণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান, তবে সেটা পুকুর রক্ষা করে। সরেজমিন দেখা যায়, রাখাল বাবুর পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আগে থেকে প্রায় ১০ ফুট ভরাট করা হয়েছে। সেখানে বাঁধানো ঘাটটিও ওই ভরাটে ঢেকে গেছে। বর্তমানে ওখান থেকে আরও ১০ ফুট পুকুরের মধ্যে বাঁশ পুঁতে দেওয়া হয়েছে। ওই অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরের উত্তর-পশ্চিম পাড়ে রড-সিমেন্ট-পাথর দিয়ে পাইলিং করার জন্য যন্ত্র (মেশিন) স্থাপন করা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, রাখাল বাবুর পুকুরের চারপাশে হাঁটার পথ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পুকুরের পশ্চিম পাশে নালা থেকে চার ফুট বাদ দিয়ে হাঁটার জন্য পুকুরের ভিতর ছয় ফুট ফুটপাথ নির্মাণ করা হবে। বাকি অংশে সৌন্দর্যবর্ধন এবং আলোকসজ্জা করা হবে।

নগর পরিকল্পনাবিদ নন্দিতা বসু বলেন, মাস্টারপ্ল্যানে বলা আছে, নগরীর পুকুরগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। কোনো অংশ ভরাট করা যাবে না। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী হুবহু উন্নয়ন হচ্ছে বলা যাবে না। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে। হাঁটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে।

বিডি প্রতিদিন/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর